জাঁ জেনের কবিতা "মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি : অনুবাদ -- মলয় রায়চৌধুরী
জাঁ জেনের কবিতা : মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
কবিতাটি সম্পর্কে জাঁ জেনের বক্তব্য : “আমি এই কবিতাটি আমার বন্ধু মরিস পিলোর্গেকে উৎসর্গ করেছি, যার উজ্বল মুখ আর দেহ আমার ঘুমহীন রাতগুলোয় ঘাপটি মেরে ঢোকে। আত্মার আত্মীয় হিসাবে তার জীবনের শেষ চল্লিশ দিন তার সঙ্গেই আমি বেঁচেছি । সে ছিল পায়ে চেন বাঁধা অবস্হায় এবং অনেকসময়ে দুই হাতেও, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অন্ধকার কুঠুরিতে, সাঁ-ব্রিয়েক কারাগারে । সংবাদপত্রগুলো আসল ব্যাপারটাই ধরতে পারেনি । তারা নির্বোধ প্রবন্ধগুলোর সঙ্গে সায় দিয়েছে যেগুলো পিলোর্গের মৃত্যু নিয়ে আহ্লাদ করেছিল । ইউভ্রে সংবাদপত্র লিখেছিল, ‘এই বালক ছিল আরেক নিয়তির উপযুক্ত’ । সংক্ষেপে, তারা পিলোর্গেকে হেয় করেছিল । আমি তাকে চিনতুম, সে ছিল দেহ ও আত্মায় সৌম্যদর্শন ও মহৎ । প্রতিদিন সকালে যখন আমি আমার কুঠুরি থেকে তার কুঠুরিতে যেতুম, ওর জন্য কয়েকটা সিগারেট নিয়ে -- জেলার সাহেবকে ধন্যবাদ, কেননা তিনি পিলোর্গের সৌন্দর্য, যৌবন ও অ্যাপোলোর মতন মাধুর্যে বিমোহিত ছিলেন -- পিলোর্গে গুনগুন করে গান গাইতো আর হেসে আমাকে বলতো, সেলাম সকালবেলার জনি । পিলোর্গের বাড়ি ছিল পুই দ্য দোমে, সেখানকার টান ছিল ওর কথাবার্তায় । পিলোর্গের ঐশ্বর্ষময় করুণার সৌষ্ঠবে ঈর্ষান্বিত জুরিরা, অদৃষ্টের ভূমিকা নিয়ে, ওকে কুড়ি বছরের জন্যে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল, কেননা ও সমুদ্রের ধারে কয়েকটা বাড়িতে ডাকাতি করেছিল আর পরের দিন নিজের প্রেমিক এসকুদেরোকে খুন করেছিল ; এসকুদেরো পিলোর্গের এক হাজার ফ্রাঁ চুরি করে নিয়েছিল । এই একই আদালত পরে আদেশ দিয়েছিল যে পিলোর্গের মাথা গিলোটিনে রেখে ধড় থেকে আলাদা করে দেয়া হোক । ১৭ মার্চ ১৯৩৯ সালে পিলোর্গেকে রাষ্ট্র ওইভাবে হত্যা করে । মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যায় মরিস পিলোর্গে ।”
এই কবিতাটিতে কয়েদি ও সমকামীদের জগতে প্রচলিত বহু ইশারা প্রয়োগ করেছেন জাঁ জেনে । জেনে তাঁর কবিতায় পাঠকদের নৈতিক ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধে অন্তর্ঘাত ঘটাবার কাজ করেছেন । তিনি পাপ, পতন, ক্লেদ ইত্যাদিতে পেয়েছেন সৌন্দর্য এবং তার গুণকীর্তন করেছেন, গুরুত্ব আরোপ করেছেন নিজের অসাধারণত্বে, নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া অপরাধীদের করে তুলেছেন নিরুপম আইকন, সমকামের বিশেষ আচার-আচরণ ও শব্দভাঁড়ারকে নির্দিধায় ব্যবহার করেছেন এবং হিংস্রতা ও বিশ্বাসঘাতকতার বর্ণনাকে উপভোগ করেছেন ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জেলের উঠোনে বাতাস একটি হৃদয়কে গড়িয়ে নিয়ে চলেছে
গাছ থেকে ঝুলছে ফোঁপাতে থাকা এক দেবদূত
শ্বেতপাথরকে পাকিয়ে নভোনীল থাম
গড়ে তুলছে জরুরি দরোজা
তা আমার রাতের জন্য খোলা ।
এক বেচারা পতনরত পাখি আর ছাইয়ের স্বাদ
দেয়ালে ঘুমন্ত চোখের স্মৃতি
আর এই দুঃখে ঠাশা মুঠো যা নভোনীলকে হুমকি দিয়ে
তোমার মুখ নামিয়ে আনে
আমার হাতের
গহ্বরে ।
এই কঠিন মুখ, মুখোশের চেয়েও হালকা
দামি মণিরত্নের চেয়েও আমার হাতে ভারি ঠেকছে
প্রতিরোধের আঙুলে ; ভিজে গেছে কান্নায়
অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়ঙ্কর
এক সবুজ চাদর তাকে
ঢেকে রেখেছে ।
তোমার মুখ কঠোর । একজন গ্রিক মেষপালকের মতন
আমার বন্ধ দুই হাতের মধ্যে কাঁপছে
তোমার মুখ এক মৃত নারীর মতন
তোমার চোখ দুটো গোলাপ
আর তোমার নাক হতে পারে
এক শ্রেষ্ঠ দেবদূতের ঠোঁট ।
যদি তোমার মুখ গান গায়, তাহলে কোন নারকীয় পাপ
তোমার দূষিত বিনয়ের ঝিলমিলে তুষারকে গলিয়ে দিয়েছে
ইস্পাতের উজ্বল নক্ষত্র দিয়ে তোমার চুলের ধুলো ঝেড়েছে
আর কাঁটার মুকুট পরিয়েছে তোমার মাথায় ?
আমাকে বলো কোন উন্মাদ দুর্ভাগ্য আচমকা তোমার চোখকে মেলে ধরে
এক বিষাদ যা এতো তীব্র যে বুনো দুঃখ
তোমার শীতল চোখের জল সত্বেও
তোমার গোল মুখকে আদর করতে আতঙ্কিত হয়
শোকের মিষ্টি হাসি হেসে ?
আজ রাতে, সোনালী বালক, “চাঁদের ফেনা” গানটা গেও না
তার বদলে মিনারবাসিনী এক রাজকন্যা হও যে স্বপ্ন দেখছে
আমাদের দুর্ভাগা প্রেমের -- কিংবা ফরসা কেবিন বালক
যে উঁচু মাস্তুল থেকে নজর রাখছে ।
আর সন্ধ্যায় জাহাজ-পাটাতনে গান গাইবার জন্যে নেমে আসবে
নাবিকদের মাঝে গইবে ‘সমুদ্রের নক্ষত্রদের জয়’
ন্যাড়ামাথা আর হাঁটুগেড়ে, ধরে রেখেছে
তাদের বজ্জাত হাতে
লাফখোর লিঙ্গকে ।
তোমাকে ধর্ষণ করার জন্য, সুন্দর হঠকারী কেবিন বালক
পালোয়ান নাবিকরা এতোক্ষণে তাদের ট্রাউজারের মধ্যে টনটন করে উঠছে
আমার প্রেম, আমার প্রেম, তুমি কি আমার চাবি চুরি করবে
আমার জন্য মেলে ধরবে
শিহরিত মাস্তুলের আকাশ ?
যেখানে তুমি রাজকীয় কায়দায় পোঁতো শাদা পাগলকরা তুষার
আমার পৃষ্ঠতলে, আমার নিঃশব্দ কারাগারে :
আতঙ্কিত, মৃতের মাঝে ফুটে ওঠা ল্যাভেণ্ডার
মৃত্যু তার গৃহিণীদের নিয়ে আসবে
আর আনবে মায়াপুরুষ প্রেমিকদের…
নিজের মখমল পদক্ষেপে, একজন শিকারি পাহারাদার পাশ কাটায়
আমার চোখের খোদলে তোমার স্মৃতি রয়ে গেছে
আমরা ছাদের ওপর চড়ে হয়তো পালিয়ে যেতে পারি
ওরা বলে গিয়ানা
ভীষণ গরম জায়গা ।
ওহ দ্বীপান্তরের কলোনির মিষ্টতা
অসম্ভব আর বহুদূর
ওহ পালাবার আকাশ, সমুদ্র আর নারিকেলসারি
স্বচ্ছ ভোরবেলা, মোহময় সন্ধ্যা
শান্ত রাত, কামানো মাথা
আর চিকনত্বক গাণ্ডু !
ওহ প্রেম, চলো দুজনে মিলে এক বলিষ্ঠ প্রেমিকের স্বপ্ন দেখি
ব্র্হ্মাণ্ডের মতন বিশাল
যদিও তার দেহ ছায়ার ময়লামাখা
সে আমাদের এই স্বর্গীয় কারা-আশ্রয়ে ল্যাংটো করে শেকলে বাঁধবে
ওর সোনার দুই উরুর মাঝে
ওর পেটের ওপরে
সিগারেট ফুঁকতে-ফুঁকতে
দেবদূতের দেহ থেকে কেটে গড়ে নেয়া এক ঝলমলে কোটনা
ফুলের তোড়ার ওপরে শক্ত হয়ে ওঠে
কারনেশন আর জুঁইফুলের তোড়া
যেগুলো তোমার উজ্বল হাত কাঁপতে কাঁপতে নিয়ে যাবে
ওর অভিজাত মর্যাদায়, বিকৃতমস্তিষ্ক
তোমার চুমুর ছোঁয়ায় ।
আমার মুখগহ্বরে দুঃখ ! উথলে উঠছে তিক্ততা
আমার অসুখি হৃদয়কে ফুলিয়ে তুলছে ! আমার সুগন্ধী ভালোবাসাগুলো
দ্রুতই বিদায় নেবে, বিদায় ! বিদায়
প্রিয়তম অণ্ডকোষ ! আমার অবরুদ্ধ কন্ঠস্বরকে
থামিয়ে, বিদায়
হে বেহায়া লিঙ্গ !
গান গেও না, তুমি ফন্দিবাজ, বর্বরতা দেখাও !
পবিত্র উজ্বল গলার কচি মেয়ে হয়ে ওঠো
আর যদি তুমি ভয় না পাও, সঙ্গীতময় বালিকা
আমার অন্তরজগতে বহুকাল আগে মৃত
কুঠার দিয়ে কেটে বিচ্ছিন্ন
আমার মাথা ।
আদরের বালক, কতো সুন্দর, লিলাকফুলের মুকুট তোমার মাথায় !
আমার বিছানায় নত হও, আমার জাগ্রত লিঙ্গকে
তোমার সোনালি গালের পরশ নিতে দাও । শোনো
সেই খুনি, যে তোমার প্রেমিক
হাজার স্ফূলিঙ্গ জরিয়ে
নিজের গল্প শোনায় ।
ও গান গেয়ে বলে যে তোমার দেহকে পেয়েছিল, তোমার মুখ
আর তোমার হৃদয় -- যা এক দ্রুতগতি
শক্তিশালী অশ্বারোহীও
কখনও ফাঁক করতে পারবে না । ওহ বালক
তোমার গোলাকার হাঁটু পাবার জন্য
তোমার শীতল গলা, নরম হাত
তোমার বয়সী হতে হবে !
উড়তে হলে, তোমার রক্তাক্ত আকাশে উড়তে হলে
আর মৃতদের নিয়ে অনন্যসাধারণ মূর্তি গড়তে হলে,
এখানে আর সেখানে জড়ো করা , চারণভূমিতে, ঝোপে,
ওর মৃত্যুর জন্যে তৈরি করা ঔজ্বল্যে
আছে ওর বয়ঃসন্ধির আকাশ…।
বিষণ্ণ সকালগুলো, মদ, সিগারেট…
তামাকের ছায়া, নাবিকদের কলোনি
আমার জেলকুঠুরিতে খুনির প্রেত আসে
এক বিশাল লিঙ্গ দিয়ে আমাকে ঠেলে দ্যায়
আমাকে আঁকড়ে ধরে ।
«
এক কালো জগতকে যে গান অতিক্রম করে যায়
তা হলো এক কোটনার কান্না যে তোমার সঙ্গীতে আনমনা
তা ফাঁসিতে লটকানো একজন মানুষের
যে কাঠের মতন শক্ত
তা এক কামার্ত চোরের
মায়াময় আহ্বান ।
ষোলো বছরের এক কয়েদি সাহায্য চায়
কোনো নাবিক ওই আতঙ্কিত কয়েদিকে সাহায্য করতে এগোয় না
আরেকজন কয়েদির পা মুচড়ে
শেকলে বাঁধা ।
আমি নীল চোখের জন্য খুন করেছি
এক উদাসীন সৌন্দর্যকে
ও আমার শ্বাসরুদ্ধ ভালোবাসা কখনও বোঝেনি
তার কালো শকটে, এক অচেনা প্রেমিক
আমাকে পুজো করে মৃত
জাহাজের মতন সুন্দর ।
যখন তুমি অপরাধ করার জন্য তৈরি
নির্দয়তার মুখোশ পরে, সোনালি চুলে ঢাকা
বেহালার মিহি পাগলকরা সুরে
তোমার কেলেঙ্কারির সমর্থনে
কচুকাটা করো এক মহিলাকে ।
এরকম সময় সত্বেও, লোহাব গড়া এক রাজকুমার
হৃদয়হীন আর নিষ্ঠুর, পৃথিবীতে দেখা দেবে
যেন কোনো বুড়ি কাঁদছে ।
সর্বিপরি, ভয় পেও না
চোখ ধাঁধানো ঔজ্বল্যের সামনে ।
এই প্রেত ভিতু আকাশ থেকে নেমে আসে
অপরাধের কামোন্মাদনায় । এক বিস্ময়কর বালক
অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য নিয়ে ওর দেহ থেকে জন্মাবে
ওর বিস্ময়কর লিঙ্গের
সুগন্ধিত ধাতুরস থেকে ।
পশমের জাজিমের ওপরে কালো গ্র্যানিট পাথর
এক হাত পাছায়, শোনো ও কেমন করে কথা বলে
সূর্যের দিকে ওর পাপহীন শরীর
আর ফোয়ারার কিনার পর্যন্ত
শান্তিময়তায় প্রসারিত ।
রক্তের প্রতিটি উৎসব এক টগবগে ছোকরাকে উৎসর্গ করে
যাতে প্রথম পরীক্ষায় বালকটি সমর্থন যোগাড় করতে পারে
তোমার মানসিক যন্ত্রণা আর ভয়কে তুষ্ট করো
ওর শক্ত প্রত্যঙ্গকে শোষণ করো
কাঠিবরফের মতন ।
তোমার গালে স্পন্দিত হতে-থাকা লিঙ্গকে আলতো চিবোও
তার ফোলা মুখকে চুমু খাও, ঝাঁপ নিতে দাও
আমার প্রত্যঙ্গকে
তোমার গলার ভেতরে, এক শোষণেই গিলে নাও
ভালোবাসার রুদ্ধকন্ঠ, ফেলে দাও থুতুর সঙ্গে
মুখ খুলে !
হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করো টোটেম-গাছের মতন
আমার উল্কিদাগা ধড়, কান্না না পাওয়া পর্যন্ত তাকে পুজো করো
আমার যৌনতা তোমাকে চুরমার করে দেবে
প্রহার করবে অস্ত্রের চেয়ে বেশি
যা তোমার ভেতরে প্রবেশ করবে ।
জিনিসটা তোমার চোখের সামনে লাফিয়ে ওঠে
সামান্য মাথা নামিয়ে দ্যাখো কেমন লাফিয়ে ওঠে
এতো সুন্দর দেখতে যে চুমু খেতে ইচ্ছে করে
তুমি ঝুঁকে ফিসফিস করে তাকে বলো :
“মাদাম” !
মাদাম, আমার কথা শোনো ! মাদাম, আমরা এখানে মারা যাবো ।
খামারবাড়িটা ভুতুড়ে ! জেলখানা ভয়ে কাঁপছে !
সাহায্য করো, আমরা যাচ্ছি ! আমাদের তুলে নিয়ে চলো
আকাশে তোমার ঘরে
হে দয়ার ম্যাডোনা !
সূর্যকে হাঁক পেড়ে ডাকো যাতে সে এখানে এসে আমাকে সান্ত্বনা দেয়
গলাটিপে মারে এই গেরস্ত মোরগগুলোকে !
জল্লাদকে ঘুম পাড়াও !
আমার জানালায় নষ্টামির হাসি হাসে দিন
জেলখানা হলো মারা যাবার বিস্বাদ পাঠশালা ।
«
তোমার হাসিমাখা নেকড়েদাঁতকে আমার ঘাড়ে বিশ্রাম নিতে দাও
আমার ঘাড়ে আস্তরণ নেই আর ঘৃণাহীন
বিধবার হাতের চেয়েও হালকা আর ঐকান্তিক আমার হাত
আমার কলারের ভেতরে হাত বুলোও
এমনকি তা তোমার হৃদয়কে স্পন্দিতও করে না
ওহ এসো আমার সুন্দর সূর্য
ওহ এসো আমার স্পেনের রাত
আমার দৃষ্টির সামনে এসো যা কাল মারা যাবে
আমাকে এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে চলো
যাতে বিকারের উন্মত্ততায় ঘুরে বেড়াতে পারি ।
আকাশ জেগে উঠতে পারে, নক্ষত্রেরা ঝংকার তুলতে পারে
ফুলেরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারে, আর চারণভূমিগুলোতে
কালো ঘাসগুলো আহ্বান করতে পারে শিশিরকে
যেখানে সকাল তৃষ্ণা মেটাতে আসে
হয়তো ঘণ্টাধ্বনি হবে : আমি একা
মারা যাবো ।
ওহ এসো গো আমার গোলাপি আকাশ, ওহ এসো আমার সোনালি ঝুড়ি !
রাতে শাস্তিপ্রাপ্ত তোমার জেলবন্দীকে দেখে যাও
মাংস খুবলে নাও, মেরে ফ্যালো, ওপরে ওঠো, কামড়াও
কিন্তু এসো । তোমার গাল রাখো
আমার গোল মাথার ওপরে ।
আমরা এখনও ভালোবাসার কথা বলা শেষ করিনি
আমরা এখনও শেষ করিনি আমাদের চুরুট ফোঁকা
আমরা অবাক হই কেন আদালত দণ্ড দ্যায়
একজন সৌম্যদর্শন খুনিকে
যার তুলনায় দিনকেও ফ্যাকাশে মনে হয় ।
হে প্রেম, আমার মুখগহ্বরে এসো । হে প্রেম, দরোজা খুলে দাও !
নেমে পড়ো, আলতো হাঁটো, দালানগুলো পেরিয়ে যাও
মেষপালকের চেয়েও আলতো পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে উড়ে যাও
মৃত পাতাদের ঝটিতি চলে যাবার বদলে
বাতাস তুলে নিয়ে যাবে ।
ওহ দেয়ালের ভেতর দিয়ে যাও, আর যদি চলে যেতে হয়
আলসের ওপর হাঁটো -- ছাদের ওপরে, সাগরের ওপরে
আলোয় ঢেকে নাও নিজেকে, হুমকি প্রয়োগ করো, প্রার্থনা ব্যবহার করো
কিন্তু এসো, আমার কুক্কুরি
আমার মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে এসো।
«
আমার দোলখাবার কুঠুরিতে, ঝাউগাছের গানের সামনে উন্মুক্ত
( নাবিকদের গিঁটপাকানো দড়িতে ঝুলছে
যাদের সকালের স্বচ্ছতা সোনালী করে তোলে ) দেয়ালের ওপরের খুনিরা
নিজেদের ভোরবেলা দিয়ে মুড়ে রাখে ।
কে পলেস্তারার ওপরে বাতসের গোলাপ খোদাই করেছে ?
কে আমার বাড়ির স্বপ্ন দ্যাখে
হাঙ্গেরির তলদেশ থেকে ?
কোন বালক আমার পচা খড়ের ওপরে শুয়েছে
ঘুমভাঙার মুহূর্তে
বন্ধুদের কথা মনে করে ?
আমার উন্মাদনাকে অস্হিরতা দাও, জন্ম দাও আমার আনন্দ থেকে
সৌম্যকান্তি সেনায় ঠাশা এক সান্তনাদায়ক নরক
কোমর পর্যন্ত নগ্ন -- আর স্বকামী পুরুষের ট্রাউজার থেকে
টেনে নামাও গন্ধের অদ্ভুত ফুল
যা আমাকে বিদ্যুতের মতন আঘাত করবে ।
কে জানে কোথা থেকে উপড়ে তোলো উন্মাদ অঙ্গভঙ্গীগুলো--
বালকদের পোশাক খোলো, অত্যাচার আবিষ্কার করো,
তাদের মুখের সৌন্দর্যকে বিকৃত করো
আর গিয়ানার জেলখানা দিয়ে দাও বালকদের
যাতে তারা দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে ।
হে আমার বুড়ি মারোনি নদী, হে মিষ্টি কেয়েনের জল !
পনেরো থেকে কুড়িজন কয়েদির
আমি অবনত দেহগুলো দেখতে পাই
ফরসা বালকটিকে ঘিরে ধরেছে
পাহারাদারদের ফেলে-দেয়া সিগারেট ফুঁকছে
ফুলের মাঝে আর শ্যাওলায় ।
একটা ভিজে আধা-সিগারেট সবাইকে দুঃখিত করার জন্য যথেষ্ট
ঋজু, একা, শক্ত ফার্নের ওপরে
তাছাড়া মার্জিত এবং খাঁটি একটি ভ্রাম্যমান কামড় ।
সবচেয়ে যে কমবয়সী সে স্হির হয়ে বসে
নিজের সুন্দর পোঁদ রেখে
অপেক্ষা করে
গৃহিনী হবার জন্য ।
আর পুরোনো খুনিরা রাতের বেলায় উবু হয়ে
আচার অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হয়
একটা শুকনো কাঠি থেকে টেনে বের করবে
কোনো চটপটে কয়েদি
চুরি করা এক টুকরো আগুন
উথ্থিত লিঙ্গের চেয়েও যা
পবিত্র ও মার্জিত ।
চকচকে পেশির পালোয়ান ডাকাতও
এই কচি তরুণের সামনে নত হয়ে শ্রদ্ধা জানায়
চাঁদকে তুলে নিয়ে যায় আকাশে
হাতাহাতি প্রশমিত হয়
যখন কালো পতাকার
রহস্যময় ভাঁজগুলো
ঢেউ খেলতে থাকে ।
তোমার অঙ্গভঙ্গী তোমাকে কতো ভালো করে মুড়ে নেয় !
রক্তিম হাতের তালুতে রাখা একদিকের কাঁধ
তুমি সিগারেট ফোঁকো । আর গলায় ধোঁয়া নেমে যায়
তখন কয়েদিরা গম্ভীরমুখে নাচতে থাকে
গুরুত্ব দিয়ে, নিঃশব্দে, পারাপারি করে
তোমার মুখ থেকে ওরা এক সুগন্ধী ফোঁটা নেবে
দুটো নয়, গোল হয়ে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার
তোমার জিভ থেকে ওদের জিভে
হে বিজয়ী ভাই ।
ভয়ানক দিব্যতা, অদৃশ্য আর বজ্জাত
তুমি তখন ঝকঝকে ধাতুতে গড়া উদাসীন ও তীক্ষ্ণ
একা নিজের কথা ভাবছ, মারাত্মক ব্যবসাদার
তোমার হ্যামক থেকে দড়ি খুলে
গান গায় ।
তোমার অপলকা আত্মা পর্বতমালার ওপরে ভেসে যায়
সঙ্গে আবার যায় জাদুমথিত উড়াল
জেলকলোনি থেকে পলাতক এমন কেউ
উপত্যকার প্রান্তসীমায় মারা গেছে
ফুসফুসে গুলি খেয়ে
এমনকি তোমার কথা
না ভেবেই ।
হে বালক, চাঁদের বাতাসে জেগে ওঠো
আমার মুখের ভেতরে ঝরাও কয়েকফোটা ধাতুরস
তোমার গলা থেকে তোমার দাঁত পর্যন্ত গড়িয়ে-আসা, হে প্রেম
গর্ভবান করার জন্য, শেষ পর্যন্ত
আমাদের মহাসমাদরে বিয়ে হচ্ছে।
তোমার পরমানন্দিত দেহকে আমার দেহের সঙ্গে জুড়ে দাও
তা জঘন্যতার কারণে মারা যাচ্ছে
হে তুলতুলে মিষ্টি ইতর
তোমার গোল সোনালী অণ্ডকোষদের বিস্ময়ে
আমার কালো শ্বেতপাথরের লিঙ্গ
তোমার হৃদয়কে বিদ্ধ করবে ।
ওর যে সূর্যাস্ত পুড়ছে তাতে নিশানা করো
যেটা আমাকে খেতে চাইছে !
আমার শিকারের আত্মারা, আমার হাতে বেশি সময় নেই
এসো, সাহস থাকলে, তোমাদের পুকুর
তোমাদের জলাজঙ্গল, কাদা ছেড়ে যাও
যেখানে তুমি বুদবুদ ওড়াও ! আমাকে খুন করো ! পোড়াও !
একজন ফুরিয়ে-যাওয়া মিকেলাঞ্জেলো, আমি জীবন থেকে গড়েছি
কিন্তু প্রভু, আমি চিরকাল সৌন্দর্যের সেবা করেছি :
আমার তলপেট, আমার হাঁটু, আমার রক্তিম হাত
সবই বিপদাশঙ্কার ।
মুর্গিখামারের মোরগেরা, ফরাসিদেশের ক্রীড়াকৌতূক
দুধঅলার বালতি, বাতাসে একটা ঘণ্টা
পাথরকুচিতে এক পদক্ষেপ
আমার শার্শি শাদা আর স্বচ্ছ
এক আনন্দময় ঔ্রজ্বল্য আছে
লিখনস্লেটের কারাগারে ।
মহাশয়গণ, আমি ভীত নই !
যদি আমার মাথা গিলোটিনের চুবড়িতে গড়িয়ে পড়ে
তোমার ফ্যাকাশে মাথা নিয়ে, আমার ভাগ্যের কারণে
তোমার কৃশতনু পাছায় ।
কিংবা আরো ভালোভাবে বলতে হলে :
তোমার গলার ওপরে
হে প্রিয়...।
চেয়ে দ্যাখো ! অর্ধেক খোলা মুখের বিয়োগান্তক রাজা
তোমার উষর বাড়িয়াড়ির বাগানে আমার ঢোকার অধিকার আছে
যেখানে তুমি শক্ত হও, ঋজু, একা
দুই আঙুল তুলে
নীল কাপড়ের পর্দা
তোমার মাথা ঢেকে রেখেছে ।
আমার তন্দ্রার ভেতর দিয়ে আমি তোমার পবিত্র সদৃশকে দেখি !
ভালোবাসা ! গান ! আমার রানি !
তোমার ফ্যাকাশে চোখের মণিতে কি পুরুষের এক প্রেত
খেলার সময়ে
আমাকে যাচাই করছিল
দেয়ালের পলেস্তরার ওপরে ?
গোঁ ধরে থেকো না, প্রভাতসঙ্গীত গাইতে দাও
তোমার ভবঘুরে হৃদয় থেকে, আমাকে একা একটা চুমু দাও...।
হা ঈশ্বর, আমার গলা চিরে যাবে
যদি আমি তোমাকে চটকিয়ে হৃদয়ে পুরতে না পাই
আর ধর্ষণ করতে পারি !
«
ক্ষমা করুন ঈশ্বর কেননা আমি পাপ করেছি !
আমার কন্ঠস্বরের অশ্রু, আমার জ্বর, আমার দুঃখদুর্দশা
ফ্রান্সের মতন সুন্দর দেশকে ছেড়ে পালিয়ে যাবার পাপ
তা কি যথেষ্ট নয়, প্রভু, আমার বিছানায় গিয়ে
আশায় উপুড় হয়ে পড়ার ?
আপনার সুগন্ধী বাহুতে, আপনার তুষারের দুর্গে !
অন্ধকার জগতের প্রভু, আমি এখনও জানি কেমন করে প্রার্থনা করতে হয়
হে পিতা, এটা আমিই, যে এক সময়ে কেঁদে বলেছিল :
“সর্বোচ্চ স্বর্গের জয়,
চৌর্য ও ব্যবসায়ের পৌরাণিক
আলতো পায়ের গ্রিক দেবতা হারমেসের জয়
যিনি আমাকে রক্ষা করেন !”
মৃত্যু থেকে আমি শান্তি আর দীর্ঘ ঘুম চাইছি
ঈশ্বরের সিংহাসন রক্ষদের গান
তাদের সুগন্ধ, তাদের গলার মালা
বড়ো তপ্ত পোশাকে ক্ষুদে দেবদূতদের লোমাবরণ
আমি চাই চাঁদহীন সূর্যহীন রাত
বিস্তীর্ণ প্রান্তরের আকাশে ।
আমার মাথা গিলোটিনে কাটার সময় এটা নয়
আমি আরামে ঘুমোতে পারি ।
ওপরের ছাদে, আমার অলস প্রেম
আমার সোনালি বালক, আমার মুক্তা জেগে উঠবে
ভারি জুতো দিয়ে পিষে ফেলার জন্য
ন্যাড়া করোটির ওপর ।
«
যেন পাশের বাড়িতে কোনো মৃগিরোগি বাস করে
জেলখানাটা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ঘুমোয়
একজন মৃত মানুষের গানের অন্ধকারে ।
জলে ভাসমান নাবিকরা যদি বন্দর দেখতে পায়
তাহলে আমার লোকলস্কর উড়াল নেবে
আরেক
আমেরিকার দিকে ।
Comments
Post a Comment