অমিতাভ প্রহরাজ : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস 'রাহুকেতু'

অমিতাভ প্রহরাজ : মলয় রায়চৌধুরীর ‘রাহুকেতু’ মলয়দা মানে মলয় রায়চৌধুরীর রাহুকেতু উপন্যাসের জন্য গান্ধী বার্থডের আগের রাতের রামের মতো বিক্রী হচ্ছে। সামান্য উল্টেপাল্টে পড়া হলো আর স্বাভাবিকভাবেই বেশ ঝাঁঝালো কথা-প্রতিকথা জমে উঠলো। একভাবে বলতে গেলে মলয় রায়চৌধুরীর “রাহুকেতু” দিয়ে লেখামোর প্রথম সেশানের বৌনি হলো। মলয়দা বিজ্ঞাপনে যা বলেছিলেন তা অতি সত্য। এতে রক্তমাংসের সুনীল শক্তি সন্দীপন দীপক খুব প্রবলভাবে আছেন। সুনীল হয়েছেন অসীম গাঙ্গুলী, শক্তি হরিপদ রায়, সন্দীপন প্রদীপন চ্যাটার্জী যার অফিসের নাম নৃপতি চাটুজ্জে। কৃত্তিবাস হয়েছে রামায়ণ নট্ট কোম্পানি, আনন্দবাজার মহাভারত নট্ট কোম্পানি। সুনীল কখনো কখনো রামায়ণ নট্ট কোম্পানির অধিকারী। মলয়দা নিজে রাহুল, সমীরদা অনিকেত। উপন্যাসের শুরুই রাহুলকে পুলিশের গ্রেফতার ও তার পেছনে নেপথ্য কাহিনী নিয়ে। সুনীলের মার্গারিটারও উল্লেখ রয়েছে। সুনীল বা অসীম আইওয়া থেকে ফিরে এলে রাহুলের কাছে একটা টেলিগ্রাম আসে “অধিকারী হ্যাজ কাম ব্যাক। এ বিগ কনস্পিরেসি ইজ গোইং অন। – সিংহবাহিনী “। রাহুল প্রথমে বুঝতে পারেনি কে টেলিগ্রামটি পাঠিয়েছে। কিন্তু যারা সময়ের ওই চত্বরটি নিয়ে কিঞ্চিত নাড়াঘাঁটা করেছেন তাঁদের “সিংহবাহিনী” বললেই সেই চরম রঙীন চরিত্রটির কথা মনে পড়বেই। ওয়ান এ্যান্ড অনলি কে জি বা কৃষ্ণগোপাল মল্লিক, যিনি নিজেও এসেছেন পরে কাহিনীতে। এইরকম ছোটখাটো এ্যানেকডোটসে ভর্ত্তি রাহুকেতু। আর বিতর্কিত ঘটনার তো আস্ত শপিং মল রয়েছে ওতে। সে রামায়ণ নট্ট কোম্পানির অধিকারী রাহুলকে ডেকে থ্রেট দেওয়া বা রাহুলের পালটা বলা “আপনার প্রথম বই এর সমস্ত খরচ তো আমার দাদা অনিকেত দিয়েছিলেন”। বা দেবী রায়কে তার প্রকৃত নাম হারাধন ধাড়া বলে ডেকে মস্করা করা, ইত্যাদি অগুন্তি রেফারেন্সের ছড়াছড়ি। ফলে হয়তো মলয়দার কাম্য ছিল না, কিন্তু একটা রগরগে স্ক্যান্ডাল কোশেন্ট উপন্যাসটির সঙ্গে জুড়ে গেছে। আমি বইটি নিয়ে কিছুটা বক্তিমে করলাম এই কারনেই যে এটি লেখামোর প্রথম সেশানের সূচনাবিন্দু। আমার মলয়দার কাছে দুটি অতি বিনীত প্রশ্ন আছে, ধৃষ্টতা মাফ করবেন, এক) এই লেখাটা ওনাদের জীবদ্দশায় কি বের করা যেত না? কারন মৃতদেহ প্রতিবাদ করতে পারে না, দুই) নামগুলো যখন কাল্পনিক নামই দিলেন, তখন ও দিকে অসীম, হরিপদ রায়, নৃপতি চাটুজ্জে ইত্যাদি ধরনের নাম আর আপনার বা আপনার দাদার নাম রাহুল বা অনিকেতের মতো স্মার্ট ফিল্মি হীরো টাইপের কেন? এটা কি নামকরন থেকেই দুটো পৃথক ক্লাস বা শ্রেণী বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? যদি তাইই হয় তাহলে ‘দেবী রায়কে ওরা ইচ্ছে করে হারাধন ধাড়া বলে ডেকে মর্ষকামী আনন্দ পেত’ বলে ওদের খিস্তি দিলেন কেন? সেই একই মর্ষকামীতার দোষে তো তাহলে আপনিও দুষ্ট লেখাটির প্রথম পাতা থেকে, যেখানে নামকরণ করেছেন, এমন কি অসীম ওরফে সুনীলের ঠিকানা বলতে গিয়ে বলেছেন ওঝাপুর। মলয়দা, আপনি বয়োঃজ্যেষ্ঠ পণ্ডিত মানুষ, লেখক হিসেবেও অত্যুচ্চ মানের, আপনাকে সরাসরি মুখের ওপর হয়তো কেউ কিছু বলবেনা। আপনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলি, একটা অতি অপ্রিয় সত্যি যে লুকিয়ে নয় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রাহুকেতুর এই গরম কেকতুল্য বিক্রীর পেছনে কিন্তু সেই সুনীল, শক্তি, সন্দীপন, কৃত্তিবাস প্রমূখেরাই রয়েছে। লেখাটা কাঁচু, মাচু আর পাঁচুকে নিয়ে হলে এই চাহিদা হতোনা। তবে এটা অনস্বীকার্য যে ফিকশান ন্যারেটিভে আপনার নিজস্ব তকনিক ও প্রকরণ অসামান্য, যার ফলে এক সম্পূর্ণ অন্য আঙ্গিকের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও রিডেবিলিটি খুবই হাই, এক বিরল কম্বো। যদিও সেটা বিচার করার যোগ্যতা হয়তো আমার নেই, ঔদ্ধত্য ক্ষমা করবেন।

Comments

Popular posts from this blog

কফিহাউসে চেঙ্গিজদা, ল্যাঙড়াদা, গুলপিসি...অ্যান্টি-হিস্ট্রির আড্ডা : মলয় রায়চৌধুরী লিখিত পৃথিবীর ইতিহাস

প্রদীপ চৌধুরী, ফরাসি কবি, বাঙালি কবি, হাংরি আন্দোলনের কবি : মলয় রায়চৌধুরী

Malay Roychoudhury interviewed by Anupam Mukhopadhyay