ছোটোলোকের কবিতাসমগ্র ( দ্বিতীয় খণ্ড ) : মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা

 ছোটোলোকের কবিতাসমগ্র ( দ্বিতীয় খণ্ড ) : মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা


শেষতম প্রণয়িনী

এই বালিকাটি হীরের কণা দিয়ে গড়া, একে ছুঁলে

বালুকা-প্রতিমার মতো ঝরে যাবে আমারই ওপরে

হাজার বছর চাপা পড়ে থাকবো উট-চলা পথহীন পথে

শেষতম প্রণয়ের দুরারোগ্য অসুখের অজস্র ক্ষত হয়ে

বিদ্যুৎ-আগুনের বজ্র-স্ফুলিঙ্গ দিয়ে মোহনার সেতু

গড়তে পারলেও হীরের কণার প্রতিমাকে পাওয়া অসেতুসম্ভব

ছোঁবো না কখনও, বলব না ভার্জিন ইলিশখুকিদের সাথে

পদ্মার নৌকা হয়ে এসো স্বপ্নে, আলুলায়নের ডাক দাও।


হীরেকাটা ছুরি দিয়ে বুকের ওপরে রক্তে লিখেছি কাবিন --

দেনমোহর আমার অস্তিত্ব, যখন যেদিন ইচ্ছা, কলজে বা

হৃৎপিণ্ড কেটে নিয়ে যেও, তবুও স্পন্দন  থামবে না

তোমাকে দূরত্বে রেখে বাঁচার ক্ষুধার, দেখেছ তো 

কোরবানির পরও কতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে অস্তিত্ব জেগে থাকে

যেন নাছোড় অশীতিপর মলয় বাতাসের রেশ রয়ে গেছে--

বালি আর বাতাসের প্রণয়সম্পর্ক বুঝতে পারে না কেউ ;

না যৌনতা নয়, যৌনতা তো রাঙঝাল-করা মাংসের

অপ্রণয় ; তাছাড়া, তুমি তো রক্তমাংসের দেবী নও

হীরের কণায় গড়া কালহীন অসেতুসম্ভব মোহনার সেতু







অদ্রীশ বিশ্বাসের আত্মহত্যা

হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম

যখন আকাশের ইস্পাতে গিঁট বাঁধছিলে

দেখে নিচ্ছিলে গিঁট শক্ত হলো কিনা

পায়ের শিরাগুলো তাদের কুয়োর দড়ি দিয়ে রক্ত তো পাঠাচ্ছিল

তোমার হৃৎপিণ্ডের দিকে, ভালভ খুলে এবং বন্ধ করে 

ওই দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম শুনে তাড়া পড়ে গিয়েছিল

তোমার শরীর জুড়ে, অথচ তুমি বরফের তৈরি মাথায়

জানি না কবে কোন দিন কখন নির্ণয় নিয়ে ফেলেছিলে

আকাশের হুক থেকে ঝুলে পড়ে, ঝুলে পড়ে আত্মহত্যা করে নেবে 

শেষ প্রশ্বাসের সঙ্গে শেষ বীর্য ফোঁটা ঝরেও ঝরবে না 

কিছুটা হদিশ কি পাইনিকো ? পেয়ে তো ছিলুম--

বলেও ছিলুম, এ কী করছো অদ্রীশ তুমি, উত্তর দিলে না

নারীও পুরুষের মতো জড়িয়ে ধরতে পারে, ধরে, জানাই ছিল না

আমি তো জানোই, নারীদেরই জড়িয়ে ধরেছি চিরকাল

পুরুষকে জড়িয়ে ধরার কথা ভাবলেই বিরক্তি ধরে, বমি পায়

মনে হয় রাস্তাছাপ রাজনীতি শরীরে আশ্রয় নিতে এলো

এও বলেছিলে তুমি, চিরকাল মুক্তযৌনতার পক্ষে

রজনীশ-আশ্রমের যৌনতার খেলা সমর্থন করো, সম্পর্কের ব্যাগাটেলি 

তোমার যৌনজীবনের কথা জানতে চাইলে তবে লজ্জা পেয়েছিলে কেন

ইউরোপে গিয়ে বিদেশিনী প্রেম করেছিলে কিনা, রোমান হলিডে,

জুলিয়েট, জাঁ দুভাল, তার কোনো উত্তর দাওনি তো

তোমাকে বুঝতে পারা ক্রমশ জটিলতর করে দিয়ে তুমি

ফেলে গেলে বুদ্ধদেব বসুর উপহার দেয়া মিমিকে ১৯৬৫ সালে

লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি সম্পাদিত সিটি লাইটস জার্নালের দ্বিতীয় খণ্ডটি

যাতে হাংরিদের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, হাওয়ার্ড ম্যাককর্ডের 

বিদ্যায়তনিক ভূমিকাটিসহ, ফুটপাথ থেকে কেনার সময়ে

হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম  দ্রিম

তোমার কাছেই জানলুম, জীবনানন্দের মেয়ে মঞ্জুশ্রীর চাকরি গিয়েছিল

সাউথ পয়েন্ট থেকে, মধুসূদন সান্যালের সাথে প্রেমের কারণে

বলেছিলে তুমি, যে বিদ্রোহী সে তো সমাজবিহীন, তার কেউ নেই

তার অদ্রীশ আছে, মলয়ের প্রথম সাক্ষাৎকার তুমি নিয়েছিলে

যখন কেউই পাত্তা দিতে চায়নি আমাকে, আমার প্রবন্ধগ্রন্হের 

ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলে, জানি না কখন কবে প্রৌঢ় হয়ে গেলে

সংবাদপত্রে পড়লুম, যখন আকাশের খুঁটি থেকে ঝুলছিলে, ঘরে ছিল

আলো, নাকি অন্ধকার ঘরে তুমি শ্লেষ হাসি ঠোঁটে নিয়ে 

এনজয় করেছো প্রিয় একাকীত্ব ; তখনও কি নিজেকে নিজে নিঃশব্দে  

বলছিলে : এই বাংলায় দুইটি জিনিস আর ফিরবে না কোনোদিন :

সুভাষচন্দ্র বসু আর সিপিএম । মার্কস বা লানিন নয়, স্তালিনও নয়

মাও বা ফিদেল কাস্ত্রো নয়, কেবল সিপিএম ক্যাডারিত হাড়গিলে লোকেদের

ঘেন্না করে গেছো, তুমি তো প্যারিস রোম ফ্লোরেন্স ভেনিস ব্রিটেনে গিয়েছিলে

তবু তারা রাস্তায় তোমাকে ফেলে রায়গঞ্জে থেঁতো করেছিল

যাদবপুরের চারতলা বাড়ি থেকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়ে পাগলাগারদে

ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল, অথচ তুমি তো নিজেই বিনয় মজুমদারকে 

হাসপাতালে দেখাশোনার ভার নিয়েছিলে, বিনয় মজুমদারের বউ রাধা

আর ছেলে কেলোকে সোনাগাছি গিয়ে খুঁজে-খুঁজে ছবি তুলে এনেছিলে

অর্ঘ্য দত্তবক্সির বইয়ের মলাটেতে দেখেছি তাদের, সত্যি বলতে কি

কয় দিন কয় রাত ঝুলেছো নিজের ঘরে, তারপর পিস হেভেনের শীতাতপে নয়

কাটাপুকুর মর্গে তিন দিন পড়েছিলে, বুক চিরে ব্যবচ্ছেদ হয়েছিল ?

ডাক্তারেরা পেয়েছিল কিছু ? জমাট বেঁধে যাওয়া দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম 

জানি না । শুনিনিকো । দেহেতে পোশাক ছিল ? কোন পোশাক ?

লাশকাটা ঘরে ? চোখ আর বন্ধ করোনিকো, সম্ভবই ছিল না

সবুজ প্লাস্টিকে মোড়া, ফুল নেই, রজনীগন্ধার রিদ নেই

সাজুগুজু সুন্দরীরা এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়নিকো তোমার মরদেহ ঘিরে

কেওড়াতলায় উল্টো বন্দুক করে প্রতিষ্ঠানের সেলামি পাওনি তা জানি

নন্দন চত্বরে প্রতিষ্ঠানের মোসাহেবদের মতো শোয়ানো হয়নি দেহ

তোমার প্রিয় সন্দীপন ঘুরতো তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পিছনে পিছনে

জিগ্যেস করোনি তাঁকে সিপিএম কেন তোমাকে টার্গেট করেছিল !

আশে পাশে আরও কয়েকজনের শব ছিল, ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম

দাদা নকশাল  বলে শ্রীরামপুরের বাড়িতে হামলা করেছিল, তোমার কথায়

সেই লোকগুলো যারা বাংলার রেনেসাঁকে ধ্বংস করে গড়িয়ার মোড়ে নেচেছিল

বটতলা ফিরিয়ে আনলে তুমি গবেষণা করে, ভিক্টোরিয় বিদেশিরা যাকে

অশ্লীল ছাপ দিয়ে আদিগঙ্গার পাঁকে ছুঁড়ে ফেলেছিল 

আর কমলকুমারের রেডবুক, ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত প্রথম বাঙালি মহিলার

লেখা উপন্যাস ‘মনোত্তমা’ খুঁজে পেয়েছিল ব্রিটিশ লাইব্রেরির তাকে অযত্নে রাখা

তখন হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম

যেমন প্রথমবার প্রেসিডেন্সির প্রথম বছরে ঝালমুড়ি খেতে খেতে

প্রিন্সেপ ঘাটে, ভিক্টোরিয়ায়, ক্যানিঙের ট্রেনে, গঙ্গার খেয়া নিয়ে এপার-ওপার

মা ‘লীলাবতী’কে নিয়ে বই লিখে হয়তো ভেবেছিলে পৃথিবীতে কাজ সাঙ্গ হলো

জানবো কেমন করে বলো, এই তো সেদিন ১৯৬৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর

জন্মেছিলে তুমি, মৃত্যুর দিনটাকে আকাশের খুূঁটিকে বলে চলে গেলে

কেবল এটুকু জানি ২০১৭ সালে ১৬ই জুন কেওড়াতলার শ্মশানে প্রাঙ্গনে

ডেডবডি ক্যারিয়ার সার্ভিস গাড়িতে গোপনে শুয়ে গন্তব্যে চলে গেলে

পাখিরা কোথায় গিয়ে মারা যায় জানতে চেয়েছেন অরুন্ধতী রায়

তিমিমাছ বুড়ো হয় মারা যায়, রুই ও কাৎলা বুড়ো হয়ে মারা যায়

মারা গেলে তাদের গল্পগুলো  জলের তলায় চাপা পড়ে থাকে--

কতো কাজ বাকি রয়ে গেল, সেসব প্রজেক্টের কেউই কিচ্ছু জানে না

যাকিছু  বহুদিন সযত্নে সংগ্রহ করেছিলে সবই ফালতু মনে হলো

যা জরুরি মনে হলো তা ওই এক ঝটকায় দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম

বন্ধ করে, নিঃশব্দে অট্টহাসি হেসে, আত্মনিধন করে ফেলা…


মনসান্টো কোম্পানির বীজ

লাঙলের ফলা লেগে মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি

বেরিয়ে এলেন বলা ঠিক নয়, তিনি তো চিৎ হয়ে চোখ বুজে

শাড়ি-শায়া-ব্লাউজ ছাড়াই শুয়ে । হারাধন চাষি তো অবাক 

সেই কবে সীতা লাঙলের ফলা লেগে জন্মেছিলেন, তারপর

অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে দুই-ফাঁক জমির ভেতরে গেলেন রামকে টাটা করে

এখন আলুর ক্ষেতে দেখা দিচ্ছেন কেন, গোলমাল ঘটে গেছে নাকি

অযোধ্যায়, দণ্ডকারণ্যে, বাল্মীকির ছিটেবেড়া-দেয়া আশ্রমে !

এটা তো পশ্চিমবাংলার গণ্ডগ্রাম, শহরে যাবার রাস্তা তৈরি হয়নি

বর্ষায় কিংবা গ্রীষ্মে আত্মীয়স্বজনেরা এমুখো হয় না, ভোটবাবু আসে

বাকসো-প্যাঁটরা নিয়ে পুলিশের সাথে, শীতের সময়ে । 

চাষা ঝুঁকে মুখ দেখে বুঝতে পারলো এই সীতা তো গ্রামেরই

ফেলু সাঁতরার মেয়ে, তিন সপ্তাহ থেকে পাওয়া যাচ্ছিলনাকো--

হারাধন ঝুঁকে চুমু খেলো ঠোঁটে ফেলু সাঁতরার মেয়ে নতুন সীতাকে

মাটি দিয়ে ঢেকে আর, বুনে দিলো মনসান্টো কোম্পানির বীজ…



অবন্তিকা আমরা ইতর

অবন্তিকা, এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমার আর তোর বাড়ির সামনের ম্যানহোল আমি বা তুই পরিষ্কার করি না

দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, বল তুই

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

ম্যানহোলে নেমে লোকটা মিথেনগ্যাসে মরে গেলে আমি বা তুই তাকে তুলি না

দলিতেরা তোলে, আরও কতোকাল তুলবে, বল তুই

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমার বা তোর বাড়ির গুয়ের ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে গেলে আমি বা তুই খালাশ করি না

দলিতরা করে, আরও কতোকাল করবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমার বা তোর বাড়ির সামনে লাশ পড়ে থাকলে আমি বা তুই ভ্যান রিকশায় নিয়ে যাই না

দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমি বা তুই ভ্যান রিকশায় লাশকে পায়ে দড়ি বেঁধে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যাই না

দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমি বা তুই লাশকাটা ঘর থেকে লাশকে মর্গে নিয়ে যাই না

দলিতরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

শ্মশানে বা গোরস্তানে নিয়ে গিয়ে বেওয়ারিশ লাশের গতি আমি বা তুই করি না

দলিতেরা করে, আরও কতোকাল করবে,  তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

আমার বা তোর পাড়ার ময়লা ট্রাকে করে আমি বা তুই ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলি না

দলিতেরা নিয়ে যায়, আরও কতোকাল নিয়ে যাবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

কবিতাপাঠের শেষে শালপাতা প্লাস্টিকের কাপ কাগজের প্লেট আমি বা তুই ঝেঁটিয়ে তুলি না

দলিতেরা ঝাড়ু লাগায়, আরও কতোকাল ঝ্যাঁটাবে, তুইই বল

এটা ইতরের দেশ, আমরা ইতরের দেশে থাকি, ঠিকাছে, মানলুম

গোরু-শুয়োর মরে গেলে তাদের চামড়া ছাড়াবার জন্য আমার বা তোর ডাক পড়বে না

দলিতদের ডাক পড়বে, সেই ডাকে দলিতদের সাড়া দেয়া উচিত নয়

আমার তোর পশুদের লাশ বছরের পর বছর বেওয়ারিশ পড়ে  থাকলে আমাদের ইতরত্ব ঘুচবে

আমি বেঁচে আছি তার প্রমাণ চাই

নভেম্বর এসে গেল, মহা গণ্ডোগোলের মাস

বেঁচে আছি তার লিখিত প্রমাণ না দিলে পেনশন আটকে যাবে

নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও তাকে প্রমাণ বলে স্বীকার করা হবে না

নির্দিষ্ট একজন সই  করে রাবার স্ট্যাম্প মেরে লিখে দেবে যে বেঁচে আছি

অনুষ্কা শর্মার সই চলবে না , দীপিকা পাডুকোনের সই চলবে না

ফ্যান হিসেবে আমার নায়িকারা বছর-বছর জায়গা হারিয়ে ফেলছে বলে নয়

ওনাদের সইকে সেই লোকগুলোও মান্যতা দেবে না যারা ওনাদের ফ্যান

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস সবচে বেশি বিকোলেও ওনার সই চলবে না

উনি অতো বড়ো ঔপন্যাসিক হয়েও প্রমাণ করতে পারবেন না যে মলয় লোকটা বেঁচে আছে

জয় গোস্বামীর কবিতার বই সবচে বেশি বিকোলেও ওনার সই চলবে না

উনি অতো বড়ো কবি হয়েও প্রমাণ করতে পারবেন না যে মলয় লোকটা বেঁচে আছে

রবীন্দ্রনাথও যদি প্রমাণপত্রে সই করে দিতেন তা গ্রাহ্য হতো না

সুচিত্রা সেন যদি সই করে দিতেন তাও গ্রাহ্য হতো না

আজকাল বুড়োরাও লুকিয়ে আরেকটা বউ রাখছে গুজরাতে তামিলনাডুতে

প্রমাণ দিতে হবে অবসর নেবার পর দ্বিতীয় বিয়ে করিনি

সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিয়েছে যে লিভটুগেদারকেও স্বামী-স্ত্রীর সংসারের মান্যতা দিতে হবে

প্রমাণ দিতে হবে বউ থাকা সত্ত্বেও কচি মেয়ের সঙ্গে লিভটুগেদার করছি না

এতোগুলো  গল্পের জন্য সবকটা প্রমাণপত্রে সই চাই

আজকে পয়লা নভেম্বর

কাকে পাকড়াও করব সকাল থেকে ভেবে মরছি

নয়তো পেনশন আটকে যাবে

আমি বেঁচে আছি আমার জানতে পারা যথেষ্ট নয়

আমার ক্ষুধিত বিষ

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুদের বউ মারা গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুদের চাকরি ঝুলে গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে  বন্ধু রাসটিকেট হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধু আণ্ডারগ্রাউণ্ড হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধু  আধা-সন্ন্যাস নিলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুর জামাই মারা গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুর মেয়ে মারা গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধু সন্তানহীন রয়ে গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুদের হার্টফেল হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে নকশাল বন্ধুরা খুন হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধু জলে ডুবে মারা গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে প্রেমিকা আত্মহত্যা করে নিলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা বিদেশে লুকোলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা নেশায় জড়ালো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা বেশ্যার বাবু হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে একান্নবর্তী ভেঙে গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে আদিবাড়ি খণ্ডহর হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বাবা-মা-দাদা মারা গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা রাজসাক্ষী  হলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা মুচলেখা লিখে দিলো

আমার ক্ষুধিত বিষে বন্ধুরা শত্রু হয়ে গেলো

আমার ক্ষুধিত বিষে আমার জীবনবায়ু আছে

আলতো করে

প্রথমে কোমরে হাত দিয়ে আলতো করে ওপরে তুলুন

খেয়াল রাখবেন যাতে আরও ওপরে স্পর্শ না যায়

তারপর কোনো ধবধবে শাদা চাদরের পৃষ্ঠপটে

দুচোখ মেলে টলটলে সুস্পষ্ট নিভায় লক্ষ্য স্হির রাখুন

ভাসা অশ্রুর কণামাত্র খুঁত থাকলেও চলবে না

এবার গভীরতা যাচাই করুন তারল্যের শীল বৈভব

উপযুক্ত বয়সে রক্তিমাভের কিনারায় পাবেন ঝিলমিল

বয়স্ক শ্বেতাঙ্গিনীর কিছু কৃষ্ণাভ ; হালকা ঘুর্ণি দিয়া নাড়ান

আআহ, পাচ্ছেন তো, বাদামগন্ধী ফল-তুলতুলে মধুসৌরভ

আলতো করে ঠোঁট ঠেকান, আজ সন্ধ্যায় ও শুধু আপনার

নোট বন্ধ করুন

 

 

কমরেড পু-এর আত্মহত্যা 

কমরেড পু, ম-১ এর খুড়তুতো বোন, গলায় দড়ি বেঁধে, ঝুলে পড়ল ।

         পুলিশের ডাক্তার ট-১ জানিয়েছিল, যুবতীটি মারা গেছেন

রাত ১টা ৪০শে, তাহলে পু ওর আত্মহত্যার কবিতায়, তারিখের তলায়

         কেন সময় লিখেছে রাত ৩টে ৩০ ?

কবিতাটা থানা থেকে পাওয়া যায়নি, ইন্সপেক্টর জ-৩ বললেন,

         সনেটে লেখা আত্মহত্যার চিরকুট ফেরত দেয়া নিষেধ ।

এফ আই আর-এ লেখা ছিল, "চাঁদ ওঠে নাই, বাতাস বহিয়াছিল, শৃগালিনী

         পুংশৃগালকে ডাকিতেছিল, ইহা শরৎকাল, ৩০০ বছরের পুরানো ইঁট,

         বরগার চিড়ের কারণে চড়াইপাখির ডিম পড়িয়া ফাটিয়া গিয়াছে,

         পুংচড়াই নালিশ করিতেছিল, নথিবদ্ধ করা হইয়াছে ।"

কমরেড পু, যে ম-১ এর কাকা ন-২ এর মেয়ে, কেন আত্মহত্যা করল

         তা কবিতায় লেখেনি । পু সোভিয়েত রাষ্ট্রে যেতে চায়নি ।

         পু মনে করতো, রুবলহারামিরা নবযুগ আনতে পারবে না,

         নিজের, ছেলেমেয়ের, জ্ঞাতিগুষ্টির নবযুগ আনবে বটে,

         বাড়ি, গাড়ি, নার্সিং হোম, প্রায়ভেট স্কুল খুলে ফেলবে ।

         ম-১কে লিখে বলেছে, "ছোড়দা, ছন্দে ভুল থাকলে শুধরে দিও।"

ম-১ তো নিজেই কোনো জন্মে সনেট লেখেনি, মনে-মনে ছকে রেখেছিল,

         কখনও আত্মহত্যা করলে, নাটকের আঙ্গিকে চিরকুট লিখবে,

কেননা ম-১ এর আত্মহত্যা করার বহু কারণ জীবনে ঘটে থাকলেও,

         কাজটা ম-১ মুলতুবি রেখেছে, ম-১ এর জীবনে খলনায়ক

         সংখ্যায় বড়ো বেশি, যেমন স-২, স-৩, স-৪, শ-১, শ-২ ।

কমরেড পু-এর আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না । এই ব্যাপারটাই

         ভালো লাগে ম-১ এর, আত্মহত্যার কারণ না থাকলেও

         আত্মহত্যার ইচ্ছে । পু টাকাহারামিদেরও বিশ্বাস করতে পারেনি ।

         বলতো, "আমাদের আদর্শকে গুয়ের সমুদ্রে চুবিয়ে দেবে ।"

ইচ্ছেকে ক্রিয়ায় পালটে ফেলার আহ্লাদটাই কমরেড পু-এর

         আত্মহত্যার কারণ হতে পারে ।

পু যে নিৎশে, কাফকা, ভারতচন্দ্র, ঋত্বিক পড়তো, তা ম-১ জানে,

         'রসমঞ্জরী' পড়ে জানতে চাইতো ও কোন ধরণের যুবতী ।

পু আত্মহত্যা করার পর, বড়োঘরের বরগা, যা থেকে পু ঝুলেছিল,

         ভেঙে পুরোবাড়ি ধ্বসে পড়ল যখন, পু-এর আত্মহত্যা

         গুরুত্ব হারিয়ে হয়ে গেল বসতবাড়ির আত্মহত্যা ।

ম-১ এর ঠাকুমা অ বললেন, "ওই ঘর ছিল অভিশপ্ত, তোদের বংশের অনেক

         লম্পট পুরুষ বাইজির মদে মেশানো বিষ খেয়ে মরেছে ;

তা হত্যা ছিল না আত্মহত্যা না অতিযৌনতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আজও

         জানা যায়নি।"

ঠাকুমা অ বলে উঠেছিলেন, "ছি ছি রসমঞ্জরী ! কোন মেয়ের চুল নেই

         কোন মেয়ের কম চুল, কোন মেয়ের চুলে চুল ! ওই চুলের খোঁজেই

বংশের পুরুষগুলো মাগিদের কোঁচড়ে মুখ গুঁজে মরল । তোরা মাগিদের নিয়ে

        র‌্যালা করলে বেপাড়ায় গিয়ে করিস, সেখানকার মাগিরা

        চুল রাখে না বলে শুনিচি ।"

ম-১ এর দাদা স-১ জানতে চেয়েছিল, "এই অভিশপ্ত ব্যাপারটা কী গো?"

         ঠাকুমা অ বলেছিলেন, "ওসব আমাদের কালের ব্যাপার,

         বজরা ভাসতো, ঝাড়লন্ঠনের রোশনাই ঝিকমিক, ঘুঙুর,

         চিকের আড়াল, রুপোর রেকাবি, বিলিতি মদ, মুজরো।"

ঠাকুমার পরামর্শে ম-১ আর তার দাদা স-১ যৌবনে অনেক মাগিবাজি

         করেছিল । তরুণী গবেষকরা তা লিখে রেখেছেন ।

পু তা জানতে পারেনি, ভাগ্যিস । নয়তো এই নিমকলঙ্ককেই ওর

         আত্মহত্যার কারণ বলে শিলমোহর দিতো ।

সেই থেকে চিরকুটহীন আত্মহত্যা ম-১ এর পছন্দ । সনেটের বদলে

         পু ওয়াটার কালার এঁকে যেতে পারতো ।

ফ্রেমে আত্মহত্যা বাঁধিয়ে রাখতো ম-১ এর কাকা ন-২, আর পু-এর নিজের

         দুই বেয়াড়া ভাই জ আর ম-২ ।

আত্মহত্যার কোনো কারণ থাকা উচিত নয় । কেন ক-এর জন্য খ,

         খ-এর জন্য গ, গ-এর জন্য ঘ, ঘ-এর জন্য ঙ, ঙ-এর জন্য

আত্মহত্যা করার কারণের মানে হয় না কোনো । আত্মহত্যা করার হলে

         উঠে দাঁড়াও, বিষ খাও, সন্ধ্যার নদীতে গিয়ে ডুব দাও,

         আকাশ তোমাকে দেখুক চুল এলিয়ে সাগরের দিকে ভেসে চলেছ ।

মেরিলিন মনরোকে চুমু খেয়েছিলুম

উৎসর্গ : বিজু সাহা

মুম্বাই বিমানবন্দরে আপনার হাতে সাড়ে সাত মিনিট সময় ছিল

আরনেস্তো কার্দেনাল, কথা বলার জন্য, হ্যাণ্ডশেক করার, জড়িয়ে ধরার

গ্রাসিয়াস সেনর, গ্রাসিয়াস সেনর, শুনে বুঝে গেলেন, এবার ইংরেজিতে

সরকারি অতিথি আপনি, আমার এনসিসির পুরোনো বেরেট টুপিটা দিলুম

আপনি মাথায় পরে হাসলেন, আপনার স্যাণ্ডিনিস্টা হাতে কড়া পড়েনি, নরম

মেরিলিন মনরোকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, বললুম, জানেন, আমি একবার

চুমু খেয়েছিলুম মেরেলিন মনরোকে, টিভির কাচে ওর ঠোঁটের ওপরে

মুর্গির মাংস রেখে, চোখ বুজে, যেমন আপনি বিমানবন্দরে পোপের সামনে

নতজানু হয়েছিলেন, আমিও টিভির সামনে নতজানু, অ্যানার্কিস্ট

বংশের দোষ, আমার দাদুর বাবাও অ্যানার্কিস্ট ছিলেন, বিধবা বিয়ে করেছিলেন

আপনার হাতে চুমু খেলুম, মুর্গির মাংসের মতনই ঠাণ্ডা, আপনি একজন মন্ত্রী

পাদ্রি, কবি, মেরিলিন মনরোকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, আপনার দাড়ি যখনই

চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মেরিলিন মনরোকে চুমু খাবার স্মৃতি, আহ, ঠাণ্ডা, নরম

এনার্কিস্টদের  চুমু খাবারও জ্ঞানগম্যি নেই, চোখ বুজে, মেরিলিনকে দেখি

অপরিবর্তনীয়া, অপরিবর্তনীয়া, অপরিবর্তনীয়া, এনার্কিস্ট ঠোঁট

আরনেস্তো, শেষ পর্যন্ত স্যাণ্ডিনিস্টাদের ত্যাগ করলেন, পোপ আপনাকে

ক্ষমা করে দিয়েছেন, আমি কিন্তু মেরিলিনের চুমুকে ত্যাগ করিনি

পূর্বপুরুষ, হায়

পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে কতো কিছু যে পাইনি, অনেক ব্যাপারে

আপশোষ হয়, যেমন ন্যাড়া মাথায় গিঁটবাঁধা লম্বা টিকির জবাফুল

কাঁধের পৈতে কানে মুড়ে হাগতে-মুততে যাওয়া, সূর্য উঠলে সর্ষে তেল

মেখে নদীতে-পুকুরে স্নান আর জিভে-জড়ানো বিসর্গ-চন্দ্রবিন্দু মন্তর

খড়ম পায়ে অগুন্তি কচি-কাঁচা বউয়ের বাড়িতে, শুয়ে, পরেরটায়

কতোগুলো সন্তান পয়দা হল তার হিসেব রাখার দরকার নেই কোনো

গ্রাম থেকে গ্রামে কুশের আসন বগলে আর লাল গামছায় বাঁধা পাঁজি

রাজ দরবারে গিয়ে পাটরানির গুণগান শেষে  জমিজিরেত আদায়

কয়েকখানা স্বর্ণমুদ্রা রুপোর টাকা চাল  ফলমূল মিষ্টি ছাঁদায় বেঁধে

চণ্ডালদলের ছায়ায় যাতে না পা পড়ে কুলীনতা উবে যায় তার দূরত্ব

তৈরি করে উত্তরপুরুষদের বংশলতিকার  গণতন্ত্র থেকে ঝেড়ে ফেলা..

অবন্তিকার মাঝরাত

উৎসর্গ : পাপিয়া জেরিন

মাঝরাতে অবন্তিকার শরীর জুড়ে কতো যে হাত গজিয়ে ওঠে

আকাশের অগাধ দূরত্ব টেনে এনে আমাদের মুড়ে ফ্যালে

মরুভূমির নরম বালির ঝড়ে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে চলে

ওর সারা শরীরে লিপ্সটিক মাখা নানা রঙের অজস্র ঠোঁটের

আঠায় আমার সঙ্গে রাঙঝাল দিয়ে নিজের বুকে জুড়ে নেয়

দেহের আনাচে কানাচে গোলাপি ফাটলের স্বাসালো সঙ্গীত

কেঁপে কেঁপে ওঠে আর আমি কোনো কুলকিনারা পাই না

অবন্তিকা বলেছে, “লিখে নাও,  কুলকিনারাহীনতাই প্রেম” ।

প্রতিদিন : একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

( জীবনানন্দের 'আটবছর আগের একদিন' কবিতার প্যাশটিস )

শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে, আর তার বউ ও শিশুকে

কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে

যখন ভাঁড়ারে আর একদানা চাল নেই

বধূ-শিশু খুন করে মরতে বাধ্য হলো ।

 

বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল

প্রেম ছিল, ছিলনাকো কিছুই খাবার - জ্যোৎস্নায় - তবু সে দেখিল

ক্ষুধার প্রেতিনী ? ঘুম তো আসে না রাতভর

কেননা ক্ষুধার্ত পেটে হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ।

 

এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি !

বিষ-গ্যাঁজলা মাখা ঠোঁটে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি

আঁধার ঘুঁজির বুকে তিনজন খালি পেটে ঘুমায় এবার

কোনোদিন এই পরিবার জাগিবে না আর

খালি পেটে গাঢ় বেদনার

অবিরাম অবিরাম ক্ষুধা

তিনজনে সহিবে না আর --

এই কথা বলেছিল তারে

চাঁদ ডুবে চলে গেলে - বুভুক্ষু আঁধারে

যেন তার মেটেল দুয়ারে

মোটরসাইকেলবাহী ধর্ষকেরা এসে

 

তবুও তো নেতা জাগে

লুম্পেনেরা এসে ভোট মাগে

আরেকটি নির্বাচনের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ হুমকি দিয়ে

 

টের পাই যুথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে

চারিদিকে র‌্যাশনের ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা ;

নেতা তার আরামের সঙ্ঘারামে নেশা করে বুকনি ঝাড়তে ভালোবাসে ।

 

শ্রম ঘাম রক্ত চুষে আড্ডায় ফিরে যায় নেতা

অবরোধ-করা মোড়ে অ্যামবুলেন্সে কান্না দেখিয়াছি ।

 

কাঠফাটা খরা নয় - যেন কোনো চালের ভাঁড়ার

অধিকার করে আছে ইহাদের ভাব

দলীয় গুণ্ডাদের হাতে

বধূটি প্রাণপণ লড়িয়াছে

চাঁদ ডুবে গেলে পর নিরন্ন আঁধারে তুমি বউটিকে নিয়ে

ফলিডল খেয়েছিলে, শিশুটির গলা টিপে মেরে

যে-জীবন ফড়িঙের দোয়েলের

তা তোমার শৈশব থেকে ছিল জানা ।

 

পেটের ক্ষুধার ডাক

করেনি কি প্রতিবাদ ? ডেঙ্গুর মশা এসে রুক্ষ চামড়ায় বসে

রক্ত না পেয়ে দেয়নি কি গালাগাল ?

জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে

বলেনি কি : 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে ?

চমৎকার !

হাড়গিলেদের ঘরে ইঁদুরও আসে না ?'

জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল ক্ষুব্ধ সমাচার ?

 

জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ক ধানের ঘ্রাণ

কতোকাল পাওনিকো তুমি

মর্গে আজ হৃদয় জুড়োলো

মর্গে - শীতাতপে, তিনজন

ফলিডলে গ্যাঁজলা-ওঠা ঠোঁটে !

 

শোনো এ তিন মৃতের গল্প - ফিবছর ধান

কেটে নিয়ে চলে গেছে গাজোয়ারি করে

বি পি এল কার্ডের সাধ

মেটেনি বউকে পাঠিয়েও

দরবারি নাশকতা নিচে টেনে বধূ

মধু - আর মননের মধু

যাপনকে করতে পারেনি ক্ষুধাহীন

হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে

সইতে হয়েছে প্রতিদিন ;

তাই

লাশকাটা ঘরে

তিনজন শুয়ে আছে টেবিলের পরে ।

 

তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,

জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে

চোখ পালটায়ে কয়, 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে ?

চমৎকার !

হাঘরের মেটে ঘরে ইঁদুরও আসে না।'

 

হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার ?

স্বাধীনতার সত্তর বছর পর !

সকলে তোমার মতো সুযোগ সন্ধানী আজ - বুড়ি চাঁদটাকে ওরা

আদিগঙ্গার পাঁকে করে দিলে পার ;

যারা আসে তারাই শূন্য করে চলে যায় টাকার ভাঁড়ার ।

 

জয়িতা  ভট্টাচার্যের জন্য প্রেমের কবিতা

তোর আঘাতের ভেতরে যে প্রতিধ্বনিগুলো

পুরোনো কান্নায় সাজিয়ে রেখে দিয়েছিস

সেখানে কেঁপেছি আমি প্রতিটি রঙের অন্ধকারে

কথার সঙ্গে কথা ঘর্ষণের ভাষায় অরগ্যাজম

শব্দ-বাক্য-ইশারার চোরাবালি ছাড়া গতি নেই

যা পেয়েছিস জীবনানন্দ-শক্তি-বিনয়ের ঈর্ষার 

দুর্বলতায় ; সৌভাগ্য যে রবীন্দ্রনাথের প্রেমে 

উষ্মা ছিল না । তাই তোর ঘষাকাচ-দেহ কেবলই

হ্যামলেটদের পায়, সিগ্রেটে লবঙ্গের ধোঁয়া–

অথচ শব্দে তো আদর-ভরা, তোর ও আমার

ঈর্ষার ব্যথায় নুয়ে অসম্ভাব্যতার ট্রুব্যাডুর 

তোর হ্যামলেট জানতো না ফোর-প্লের রস

প্রেমিকের সর্বনাশা আত্মপরিচয় নিয়ে আমি

বলছি সহ্য করিসনি অপ্রেমের ক্ষমতার চাপ

সন্দেহবাতিকে নষ্ট বিছানার ফুলেল অথৈ 

চলে আয় ঝুনু চন্দ্রা জুন জায়গা বদল করি

আমি ঘোড়া তুই মন্ত্রী প্রেমের সাদাকালো খোপে

খেলি যন্ত্রণার নিরাময়, ট্রমা, আত্মপ্রবঞ্চনা,

তাড়নার পীড়া, সংকট-জর্জর মতিচ্ছন্ন মোহ

জানি ভাবছিস তুই ঝিনুকের ভেতরে রয়েছিস

অপ্রেমের কারাগারে মুক্ত হয়ে কারো আঙুলের

আঙটিতে বাইরে বেরিয়ে দেখবি গুপ্ত হাহাকার

তোর ওই হ্যামলেটের প্রেমক্রিয়া অবসিতকাল

ভেবেও দেখিসনি কেন ঘটমান সন্নিধি নয়

আমি চাই কাঁদ, হ্যাঁ, কাঁদ তুই, আঘাতের

ভেতরে যে প্রতিধ্বনিগুলো সাজিয়ে রেখেছিস

ঘুর্ণির ল্যাজের মতো পাক খেয়ে আছড়ে পড়ুক


লিজ্জত পাঁপড় - একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

উৎসর্গ : উৎপল ভট্টাচার্য

আররে ভাইই

.

ভুরুর বাবলাকাঁটায় তো পাক ধরেছে, তাই শব্দের ঘাঁতঘোঁতে তেমন লড়াই-টড়াই না থাকলে শরীরের যেখানে-যেখানে ধন্দের আনন্দ সেসব আমোদ আহ্লাদ , হরি হে, খবরের কাগজে বাসি-খোঁপার বদগন্ধউলি মেয়েমানুষ যেদিন-যেদিন ছাইরঙা ভাষায় কথা বলেন, হ্যাটমাথা বাঘশিকারীরা বাঘেদের সঙ্গে-সহগে লোপাট হয়ে গেল, চামড়ায় এঁটুলি বহনের যোগ্যতা নিয়ে তাদের চারচৌকো আলোয় আপনি গোল হয়ে বসে বললেন, ‘ওং হিং’

.

আররে ভাইই

.

জন্মদিনে-পাওয়া একপুকুর ঢেউমাখা রোদে বসে পরীক্ষার খাতায় ইতিহাস টিচার যখন ঘটনা শোধরাচ্ছিলেন, সিল্কের লুঙ্গি গরদের পাঞ্জাবি বিদ্যাসাগর চটি পায়ে দে-মশায় ব্রোঞ্জের ঘোড়ায় ছিপটি হাতে হাঁক পেড়েছিলেন, হেই-সামালো হেই-সামালো হেই-সামালো ভাষা হো, হরি হে , গোদরেজ তালার গর্তের ভুলভুলাইয়ায় ছারপোকাটা বললে, ‘ওং হিং’

.

আররে ভাইই

.

কবিতার মধ্যে ডুগডুগি বাজানি ভিড়ে যিনি স্টেথোসকোপ ফিরি করছিলেন, তাঁর সঙ্গে পাঙ্গা নেবার জন্যে রাস্তা তৈরি হবার আগেই আপনি অতগুলো মাইলপাথর রেডি করে ফেললেন, হরি হে , ঝর্ণার মুখে এসে জল তার গতি ভুলে গেলে পুনঃপতনের জন্যে উঠে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই, কেননা সমবেদনায় ভুগে-ভুগে আপনি এমন ক্লান্ত যে বলে ফেললেন, ‘ওং হিং’

.

আররে ভাইই

.

সমস্যা টিকিয়ে রাখার আহ্লাদে, টেবিলের দুদিকের পরস্পরবিরোধী মনঃস্হিতি নিয়ে ফাঁকা চেয়ারগোলোয়, খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে বের-করা যেসব জ্ঞানগম্যি পড়েছিল, হরি হে , যে-ভাষায় আপনি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে পিনাপ পোস্টারের মেয়েটি, ঠিক যেভাবে কুমোররা সূর্যকে হাঁক পেড়ে ডাকে , হরি হে , খ্যাতি পাবার ধান্দায় একাধটা লাশ দু-দশ দশকে ভেসে উঠে বলে, ‘ওং হিং’

.

আররে ভাইই

.

আপনি তো হাত দিয়ে অনুভুতি বানান, বাসের ভিড়ে-দাঁড়ানো মড়াদের গাদাগাদি গরমে যখন না-বলা সংলাপে পায়ের পাতা ঝিমঝিম করে, আমার আমিটা আপনার আপনিকে বলেছিল, এই আমার হাত ধরুন না, মাংস খেতে হলে মৃতের মাংসই খেতে হবে, হরি হে , চেখে বলুন, ‘ওং হিং’

বুড়ির ভ্যালেনটাইন

এ-বয়সে আর হাঁটু মুড়ে গোলাপ দিচ্ছ কেন

নিজে তো উঠে দাঁড়াতে পারবে না

আমিও পারবো না টেনে তুলতে তোমাকে

দুজনেই পড়ব মেঝেতে হাড়গোড় ভেঙে

ওয়াচম্যানকেও ডাকতে পারবো না

তার চেয়ে দাঁতটা দেখিয়ে এসো

নড়ছে তো সাত দিন থেকে : দুবেলা খিচুড়ি খাচ্ছ

গোলাপটা বরং খোঁপায় গুঁজে দাও কাজের বউটার

আমাদের জন্য এতো খাটে

 

জখম

চাদোয়ায় আগুন লাগিয়ে

তার নীচে শুয়ে আকাশের উরন্ত নীল দেখছি এখন

দু:খ কষ্টের শুনিনি মুলতুবি রেখে জেরা করে নিচ্ছি

হাতের রেখার ওপর দিয়ে গ্রামাফোনের পিন চালিয়ে জেনে নিচ্ছি

আমার ভবিষ্যত

বুকের বাদিকের আর্মেচার পুড়ে গেছে বহুকাল

এখন চোখ জ্বালা কোর্ছে মলয়ের কঙ্কাল জ্বালানোর ধোয়ায়

আশপাশ দিয়ে ঘন্টায় ৯৯ কিলোমিটার দরে উড়ে যাচ্ছে ঝড়

কব্জিতে ঘড়ির কাটা রেখে চলে যাচ্ছে

সারসার সদ্বিঠ্যাং মানুষের লাভলোকসানময় দল

১টা চামচিকে অনেক নিচু দিয়ে উড়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে

ওদিকে ফাকা মাঠের মধ্যে সাজানো রয়েছে

হাট-কোরে খোলা ৮০০০০০ কাঠের দরোজা

আমার সামনে সমস্ত দৃশ্য ধেবড়ে গেছে দেখতে পাচ্ছি

কারুর সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না আমার

আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে

১৬ ডিভিসন কাক আমার হাত পা ধড় ঘিরে চক্কোর কাটছে ২৫ বছর

হাড়ের রেলিঙ জাপ্টে দাড়িয়ে রয়েছে আমারি রক্ত মাংস

মলয়ের গায়ের চামড়া তুলে ফেলে

তার ঘাতঘোতের আত্মাভিমানী ফ্রেস্কো দেখতে পাচ্ছি

শরীরের ভিতর চোলছে আয়ুহীন অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ

হেমোগ্লোবিনে টহলদার আধারের উস্কানিমুলক কাজ চোলছে ফিমিনিট

এখন চুপচাপ ভেবে দেখছি আমাকে নিয়ে কি করা যায়

বংশপরস্পরায় পেয়েছি ৬০০০ বছরের পালিশ খাওয়া আপতকালীন ক্রুরতা

চামড়ার পুরনো পলেস্তরা চেছে মানুষের বোধহীনতা আমি ফেলে দিচ্ছি

ভাত খেয়ে আচাবার পর পরিষ্কার নখগুলোকে কেমন মহানুভব মনে হচ্ছে

আমার হারের ফাকফোকোরে গোত্তা মেরে উঠছে গরম গনগনে লু

আমার লাশ আগাগোড়া তল্লাশ কোরে হৃতপিন্ড না পেয়ে

মানুষেরা যে যার ঘরে ফিরে যাচ্ছে

মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে খুন আর সেবা করার কায়দা কানুন

শরীর থেকে পড়ে যাওয়া হাত পা তুলে লাগিয়ে নিয়ে ফিরে যেতে হয়

দুপুরের রালচে হাওয়ায় আমি দুচোখ বুঝে শুয়ে আছি

কাঁচা কয়লার গন্ধ ঘোঁট পাকিয়ে উঠছে দুঁদে অসংযমী শিরার ১৮ নং টোটায়

আমার বাবা-মা’র ক্রোমোজম

আমাকে আমার দিকহীন খপ্পরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিনা জানি না

ওফ্

ব্রেনের ক্রুদ্ধ শাঁসের ভাপ থেকে

রেটিনার উপর রঙিন নাইট্রো সেলুলোজ ঝরে পড়ছে

সমবেদনাজ্ঞাপক চিঠির আড়ত গড়ে উঠছে

আধভেজানো সদর দরোজার ভবিষ্যৎহীন চৌকাঠে

আখচার জং ধরে যাচ্ছে বহুব্যাবহৃত মাংসপেশীতে

মাটির সঙ্গে ১ যোগে গলে ঘাঁট হয়ে যাচ্ছে জ্ঞানী আর মূর্খের সমসত্য মড়া

গর্ভের ফ্যাচাঙে

১টা কোরে কনভার্সান চার্ট নিয়ে ওৎ পেতে রয়েছেন প্রতিটি নারী

আমার ১ই শিরার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে

গান্ধী আর আত্তিলার সমকেমিকাল রক্ত

কিছুই হল না আমার পৃথিবীরো খিছু হবে না শেষ ওব্দি

তেজারতি কর্বার করা হল না

হাওয়ায় ভাসমান গাছগাছালির বীজ

আমার অনুর্বর ঘামের উপর বসে ফ্যাঁকড়া ছড়াতে চাইছে

বুমঘাঙের আপেলবাগানে বসে ব্যর্থতার কথা ভেবেছি দুপুরে রোদ্দুরে

শয্যের শাঁসের হেঁসেলে ঢুকে-থাকা পোকার অলস আরামের খোঁজে

ছুটোছুটি করা হল না আমার

নিজের শরীরের ভেতরদিকেই আজকাল থুতু ফেলছি আমি

আয়নায় শঠ পারা থেকে খুঁটে তুলছি আমি

আমার হিংস্র চোখমুখের আত্মত্রাণকারী ছাপছোপ

সকলেই যে-যার কাজ গুছিয়ে ঘাটবাবুর সার্টিফিকেট নিতে চলে যাচ্ছে

আমারি মগজ থেকে বেরিয়ে

২০০০ শিকারী কুকুর আমাকে তাড়া কোরে ফির্ছে ২৫ বছর

স্ত্রীলোকদের পায়ে চলা রাস্তার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে

আমি এগিয়ে যাচ্ছি তাদের আমেচার আস্তানার দিকে

অন্ধকার রাস্তার ওপর পায়ের শাদা ছাপ দেখে

আমার বুক ছাঁৎ কোরে উঠেছিল

দেওয়াল থেকে ঝুরঝুরে বালি খসে পড়ার শব্দে কাঁটা দিয়ে উঠতে চেয়েছে

আমার ম্লান চামড়া

লোমের চিমনিগুলো দিয়ে ঠেলাঠেলি মেরে বেরিয়ে যাচ্ছে

আমার সির্দাঁড়া পুড়ে যাওয়া ধোঁয়া

উইদের থুতু দিয়ে তৈরি মাটির শিরার মধ্য দিয়ে

কাঁচা মাংসের লাশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে ডেঁয়ো পিঁপড়ের সার

গায়ে-পড়া ঢেউদের সামুদ্রিক পাড় দিয়ে

খালি-পায়ে আমি চলে যাচ্ছি শকুনদের বিমর্ষ আড্ডায়

আমি জেনেছি খাদ্যজিনিষের মধ্যেই ১ সঙ্গে লুকিয়ে থাকে

রক্ত আর পুঁজের আকালষেঁড়ে রং

আখের বিকারগ্রস্ত মেধা মাটি থেকে শুষে তোলে

তরল পরোপকারী নোংরামি

আমার নোংরামি আমার ভালোবাসা আমার রক্ত

মেঘের পাশে পাশে উড়ে যায় ফেলে-দেওয়া রক্তমাখা ন্যাকড়া

হৃৎযন্ত্রের আলতো কাঁপনে কেঁপে ওঠা

নীলা-র বাঁদিকে রুগ্ন স্তন আমার মনে পড়ছে এখন

মরবার দিন অব্দি মুখ বুজে জীবনের লাথানি সয়ে যেতে হয়

এখন আমার হৃদমেশিনের যায়গায় ঝুলছে ১টা জ্বলন্ত ম্যান্টল্

এখন আমার ধমনীদের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে

যোগবিযোগের চিহ্ন আর কাঁটা-ভাঙা কম্পাস

মাটির ভেতর সিসের মগজে ওৎ পেতে আছে

সংবাদপত্রিকাদের হ্যাঁ কিংবা না

আমি বুঝতে পার্ছিনা আমি স্বধর্মনিষ্ঠ কি না

আমার পা বুঝতে পার্ছেনা যে আমিই তাদের গতি আর দিক নিয়ন্ত্রণ কোর্ছি

অফেরৎযোগ্য নারী নিয়ে

আয়কর / শুল্ককর দিয়ে বুড়ো হয়ে যেতে হবে কি না জানি না

নিজের সই জ্বাল করে চালিয়ে দিলুম গোটা শীতকাল

চাইনি তবু জন্মালাম

জুতোর ফিতে না খুলেই

এবার আমি জোনাকিহীন অন্ধকারে লাফিয়ে পড়তে চাই

সকলেই কালকের জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছে

কালকের জন্যই আজ সন্ধেবেলা চোলছে জুতোর মমতায় পালিশ

ঘোরালো রাস্তা চলে যায় মানুষের পায়ের কাছ বরাবর ১ দিন না ১ দিন

দেবদারুর নতুন বাক্সে চড়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের লোভে

দেশ বিদেশের সীমান্ত অব্দি চলে যায় গ্রিজমাখা ৩০৩ কার্তুজ

বৃদ্ধের ২৫১০ বছর পর গান্ধীময়দানে পড়ে থাকে

পুলিশ ও অপুলিশ মার্পিটের ১৯৬৫ মডেলের জুতোছাতা

কোকেন আর জাল টাকার আড়তে

দেদার আরামে ১ সঙ্গে শুয়ে থাকে ভারত আর চিনের নাগরিক

আমি অন্ধ ভিকিরির হাত থেকে ৫ পয়সার চাক্তি তুলে নিয়েছিলাম

আমি খইয়ের ভেতর থেকে কাড়াকাড়ি কোরে ছিনিয়ে নিয়েছি

মড়ার দয়ালু পয়সা

সাঁতার না-জেনেও নৌকোয় পার হয়ছি মরে যাবার ভয়

আমাকে ধিক্কার দেয়া যায় আমাকে উপেক্ষা করা যায় না

ঈশ্বর যন্ত্রস্থ

আমি ভুল গর্ভ থেকে নেবে ভুল নাম নিয়ে ঘুড়ে বেড়ালাম ৬৫টা বছর

ভুল ইচ্ছে থেকে পেয়েছি ভুল দ্বেষ

ভুল সুখ থেকে ভুল দুঃখ পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল

আমি ভুল সংঘাত থেকে জড়ো কোরেছি ভুল চেতনা

আহ্ এ ভুল কোল্কাতা এ ভুল মানুষমানুষী

ভুল দম্ভ থেকে তৈরি কোরেছি ভুল হিংসে

আমি ভুল শৌচকাজ থেকে জেনেছি ভুল সরলতা

ভুল সংযম আমাকে এনে দিয়েছে ভুল বিরাগ

আমি ভুল অহংকার নিয়ে ভুল ভিড়ের কাছে চলে গেছি

আমি ভুল ভক্তি নিয়ে যে-কোনো কারুর খোঁজে জেগে বসে রইলুম সারারাত

ভুল স্বপ্ন দেখে ভুল জায়গায় স্ত্রীযন্ত্রের বদলে পেলুম অশ্বত্থের পাতা

ভুল শিক্ষা থেকে ভুল সুনাম পেয়ে কব্জির শিরা ছিঁড়ে ফেলে দিলুম

আমি ভুল নারীর পায়ের ওপরে রেখেছিলুম আমার নির্ভুল ভালোবাসা

ভুল প্রেম থেকে ভুল গন্ধের কাছে আমাকে অনেকবার চলে যেতে হল

আমি ভুল মদরুটি থেকে তৈরি কোরেছি আমার ভুল রক্তমাংস

ভুল সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে ভুল মত্লবের পাল্লায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওড়চ্ছি

আমার ভুল ট্যানকরা চামড়া

নতুন চামড়া দেখব বলে আমি আমার ঘায়ের মামড়ি খুঁটে ফেলছি এখন

আস্তিনের তলায় আধপচা দগদগে ঘা লুকিয়ে

সকলের সঙ্গে হাত নেড়ে কথা বোলে যাচ্ছি

মুখের চামড়া নিচে আমার খুলি সব সময় হা কোরে হাসছে

আহ্

আঙ্গুলগুলো হৃদয়ের সঙ্গে সেলাই কোরে সিল কোরে রেখেছিলুম ২৫ বছর

আমি নদীর অযোগ্য জলে ডুবে গিয়েও ফিরে এসেছি কলের নিচে

মরামানুষের হতাশ জামাকাপড় পরে তারি খোঁজে ঘুরেছি রাস্তায় রাস্তায়

আমি অন্ধকারে কিছু একটা আকড়ে থাকার জন্যে চলে এলুম ২৫ বছর

অন্ধকারে নিজের সঙ্গে নিজে ধাক্কা খেয়ে আমাকে জাপ্টে র্ধোলুম

অন্ধকারে নিজেকে দেখে চমকে উঠলুম

ছাগল নাদির ঘুটেতে আগুন পোয়ালুম সারাটা চাকরিহীন মাঘমাস

মাসিক ২৮৭.৭৫ টাকা ভাড়ায়

আমাকে খাটিয়ে নিল জমিদারী নিলামের চোথাপত্তর

আমি খালি পেটে ইন্টারভ্যু দিতে গিয়ে বলে এলুম অর্থমন্ত্রীর কাকিমার নাম

ঢালু জায়গায় প্রস্রাব কোর্লে নিজেরি পায়ের দিকে স্রোত গড়িয়ে আসে

শরীরে এ.সি. আর ডি.সি. ২ রকম শিরার ব্যবহারই পুরোদস্তুর চালালুম

স্বপ্নে আমি নীল আমেরিকা থেকে ধূসর জর্ডন ওব্দি চালিয়ে ফেরাচ্ছি

আমার হাইফেন গোড়ালি

আঘাতের রক্ত খুঁজতে খুঁজতে ১৫০০ মাইল চলে যায় সহৃদয় বোরিক তুলো

এখন মলয়ের বেওয়ারিশ আশা আকাঙ্খা ফির্ছে

আমার হাড়হাভাতে কোলজের খাপখোপে

বিশ্বভাতৃত্ব শিখে এঁদো বস্তিতে ফিরে যাচ্ছে মানুষ

সফল মানুষদের লাংস থেকে আমি কার্বন রড টেনে বের কোরে আনছি

আমি গোলাপের পায়ের কাছে বসে দেখছি

কী কোরে তার কুঁড়ির ভেতর থেকে ফেটে বেরোয় ৩৪টা আলজিভ

একগাদা সবুজ কাচের টুকরো দেখছি চৈত্রের আতাগাছের ধুলোতে চামড়ায়

বিদেশি খনির সোরাগন্ধক এসে ফেটে পড়ছে ঝিকাবাড়ির মাঠময়দানে

আশেপাশের রাজ্য থেকে ৯৯০০০ পুরোনো জিভছোলা উড়ে এসে

কোল্কাতার আকাশ চষে ফলছে

গোখরোর মাথায় খুলে উঠছে জাপানি হাতপাখা আর মানুষের জীবন্ত পাঞ্জা

আমি লুকিয়ে-চুরিয়ে নিজের সমস্ত গতিবিধির ওপর লক্ষ রাখছি

গর্ভের ভেতরেই সকলে শিখে আসছে তাদের অপ্রাপ্ত জীবনের ১ম ডিগবাজি

আমার মুখ কান পায়ুকোটর দিয়ে

২৫ বছরের পুরোনো টাইমটেব্ লের ছেঁড়া পাতা বেরিয়ে আসছে

আদালতের অবমাননার দায়ে নিয়মের কাছে মাথা নোয়াচ্ছে ডারউইনের মানুষ

মরে যাবার আগে

ক্যাজুয়াল লিভ / অর্ডিনারি লিভ / সিক্ লিভ সম্পর্কে ভাবিত হচ্ছে মানুষমানুষী

খাবার সমেত হাত ঠিক উঠে আসছে মুখের কাছে

মহাজ্ঞানী রেডিও থেকে থুতুর ছাঁট আসছে এদিকে

উলটো শার্ট পরে আমি দেখাচ্ছি

সেলায়ের দাগ বগল আর কলারে বসে থাকা তেলচিটে ময়লা

চশ্মার কাচের ওপরে লেগে ছিটকে চলে যাচ্ছে ক্রুদ্ধ ভিমরুল

লোকলস্করের কান খুঁজে চলে যাচ্ছে ধ্বনিপ্রতিধ্বনি

আমি যে-বাড়িতে জন্মেছিলুম তাকে ভেঙে জন্ম নিয়ন্ত্রণের আপিস তৈরি হয়েছে

অনেক কিছু না-বুঝে না-জেনে না-শিখে মরে যেতে হবে

ওফ্

আমি জানোয়ারের কাছে শিখলুম তর্জনী অনুগত মানুষপনা

বাবার ধর্মের কাছে হাত পেতেছি পরিত্রাণের জন্যে

মায়ের ধর্মহীনতার কাছে ২৫ বছর

মাথার শিয়রে নকল ধারালো দাঁত ভিজিয়ে শোবার জন্যে এবার তৈরি হচ্ছি

এখানে কেউ নিচু কোর্টে হেরে গিয়ে সদর কোর্টে জিতে ফিরে আসে

কেউ মানুষের কাছে জিতে গিয়ে মানুষের কাছে হেরে যায়

ভারতের রাজপথ দিয়ে বুলেটপ্রুফ পেশাদার দেশপ্রেমিকরা আর একলা হাঁটে না

আণবিক চুল্লি আর রেডক্রসের কার্যখেত

আপোশে ভাগ কোরে কর্তব্যবোধে ঘেমে উঠে মানুষ

ভূমধ্যাকর্ষণের হাতে নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দেবার পর ঘুম আসে

মানুষের আদর খেতে পাথরের নুড়ি চলে আসে পেতলের পূজনীয় সিংহাসনের

সমাজের সোহাগ ছেড়ে পাহাড়জঙ্গলের দিকে চলে যায়

আধান্যাংটো মানুষ ও তার নিজেস্ব দেশলাই

খুলির হোল্ডঅলে থাকে পরিচিত মুখ রাস্তাঘাট আর রঙিন অস্থায়ী মানচিত্র

আমি স্ত্রীলোক থেকে স্ত্রীলোকের কাছে ছুটে গেলুম

নিজের দুঃখকষ্ট চেপে রাখতে

নিজের দু:খ কষ্ট চেপে রাখতে

কাঁচা জল/গরম জল/বাসি জল খেয়েও ভেতরটা সাফ কোর্তে পার্লুম না

আগেকার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা কোরে এলুম

তার প্রসবকালীন ছুটিতে

আমি বাঙলাদেশ বোলতে বুঝছি

আমার কঙ্কালের জয়েন্টে লাগানো সৎ-অসৎ নাটবল্টু

ঘরের ৪টে মারমুখী দেয়াল আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর ফিরে যাচ্ছে

ছুরির নিচে গিনিপিগদের সঙ্গে শুয়ে রয়েছি ২৫ বছর

আমি জ্যোৎস্না বোলতে বুঝেছি আমার শীতাতপ নিয়ন্ত্রত চামড়া

গুপোলাগা গোড়ালি সমেত ঠ্যাঙ আজ পাঠিয়ে দিলুম ২১ নং তদন্ত কমিশনে

আজকের খবরের কাগজটা কার লেখা জান্তে পার্লুমনা এখনও

ডাকবাক্সের ভূগর্ভ সুড়ঙ্গ দিয়ে নেবে গেছে

গেল-অসুখে লেখা সব প্রতিবাদপত্র

২টো লাংসের মাঝখানের ফাঁকটুকুতে

হু হু কোরে ঝাপ্টা মেরে উঠতে চায় উদ্দেশ্যহীন বিষাদ

নিরুদ্দিষ্টের প্রতি ছাপানো সবকটা চিঠি আমারি জন্যে দেয়া থাকে কিনা জানিনা

নিজের পায়ে কুঠারাঘাত কোর্তে গিয়ে কুঠার ভেঙে যাচ্ছে ফিদফায়

কোল্কাতার আকাশ দিয়ে এখন সমাজকল্যাণকমিটির কাগজপত্তর উড়ে যাচ্ছে

ঘুমের মধ্যেই আমি আজ সকালের-দিকে ফুঁপিয়ে উঠেছিলুম

এখন স্বপ্ন থেকে উঠেই পেতে দিচ্ছি আর সি সি গাঁথুনি করা কাঁধ

আমি নাপিতের ক্ষুরের কাছে শিখেছি ধৈর্য

আঙ্গিক মানে তোমার হাড় আর হাড়ের আণবিক সাজসরঞ্জাম

এবার আমি নিজেই সবকিছু জাচাই কোরে দেখতে চাই

জান্তে চাই কাকে বলে বিষ কাকে বলে মলয় রায়চৌধুরী

ভরতবর্ষ কারুর বাপের একলার কিনা জান্তে চাই

স্রেফ নিজে আগাপাশতলা ভুগে দেখতে চাই কাকে বলে অধঃপতন

আমি স্বাধীন ভারতবর্ষবোলতে জেনেছিলুম অক্সিজেন

আজ প্রেসের মেশিনের সামনে মাতৃজঠরের কথা মনে পড়ে যায়

ঘুম থেকে উঠে বালিশের নীচে পেলুম স্প্রিঙখোলা ছুরি

বারবার পেছন ফিরেও দেখতে পাচ্ছি না কারা সেই থেকে ফিসফিস কোর্ছে

ছাদের আলসেতে পড়ে থাকা রহস্যময়

হাড়ের টুকরো দেখে কাল ভয় কোর্ছিল

আমার হাড়ের ব্যথা আমি সারাতে পার্লুমনা আজো

ভারতবর্ষের মাটির তলা থেকে জ্বলন্ত মাদুর তুলে এনে বিলোলুম

বন্যাপিড়িত এলাকায়

খিল আর ছিটকিনির কাছে বসে শিখে এলুম আত্মপরিত্রাণ

পুরোপুরি চার দিন গুম মেরে থেকে আমার গলা ভেঙে গেল

আমি খালি পেটে মদ খেয়ে লাফিয়ে দেখেছি কঙ্কাল আওয়াজ

আমি নদীর কাছ থেক জেনে এলুম

মাটিপাথর কামড়ে এগিয়ে যাবার খসড়া পরিকল্পনা

শীতকালেও আমার গোড়ালির ঘাম

আমার মোজায় অসামাজিক গন্ধ ঠুসে তোলে

বাহুমূলে মাটি জমে গিয়ে

আমার ২ কাঁধ ফুঁড়ে বেরোচ্ছে স্পর্শময় ইউকালিপটাস

প্রশান্ত মহাসাগরের আকরিক মাটি

একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে চাঁদ হয়ে গেল

আগে বা পেছন দিয়ে যাওয়া সীমান্ত

মানুষের প্রবাসী বা বিদেশী হবার চাল চেলে রেখে

মেঘের নীচে নীচে নেমে যায় ১২০০ মাইল ভ্রাম্যমান ছায়া

সমস্ত কিছুর গা থেকে

তাদের নাম গুলো আলতো কোরে বেরিয়ে আসছে এখন

মানুষের দেয়া আইনানুগ মৃত্যুদন্ড পেয়ে কেবল মানুষই মরে যাচ্ছে

ফ্যাক্ট্রি আর বিবাহ ২ টোরই রেজিস্ট্রি হয়ে চোলছে নিয়মমাফিক

কোল্কাতার মদের ব্যবসা থেকে নৈতিক মাইনে পাচ্ছে ৪৫০০০ডানহাত

১ একরে ১৩৫ জোড়া ঠেসাঠেসি আরামে খাচ্ছে

১৯৬৫ মডেলের কোল্কাতা

প্রস্রাব কোরতে বারন কোরে

কোল্কাতা তার মানইজ্জত বাচিয়ে রাখেছে

গা পড়গনার আশ্রয়প্রার্থী হয়ে ফিরে যাচ্ছে কল মিল কার্খানা

কোল্কাতার আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ২৭৬০ লক্ষ টাকার মানিঅর্ডার

মানুষের ঘুম খুঁজে বের কোর্ছে রাত্তিরবেলার রোয়াক ফুটপাথ গাড়িবারান্দা

সফল মানুষেরা সন্ধ্যাবেলায় প্রাতঃকৃত্য সেরে নিচ্ছে

৬৮০০০ প্রচারপত্র সকাল থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোল্কাতার ফাঁকা দেয়াল

উৎসব আর ধর্মানুষ্ঠানের রুটিন মেনে ঘা বদল কোরে নিচ্ছে চাকুরিয়া ভিকিরি

রাদ্দুপুরে মাঝসড়কের ওপর লাল আলো রেখে জেবঅদের রং ফেরাচ্ছে উন্নয়নকামী পেন্টার

রেডিওতে কবিতা আর ভোটের ফলাফল খোলসা কোরে ব্রডকাস্ট হচ্ছে

দাঁতে দাঁত চেপে আমি অপেক্ষা কোর্ছি চলন্ত ফুটবোর্ডে

আমার নিজেরি বাড়ির খোঁজে আমি রাস্তায় রাস্তায় ২৫ বছর ঘুরে বেড়ালুম

বসতিবিরল এঁদো গলির মাটিতে ছড়ানো

অজস্র ধবধবে পাশবালিশ ডিঙিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি

থামগুলোতে পিঠ ঠেসে দাঁড়াবার জন্যে জায়গা কাড়াকাড়ি কোর্ছে রাংবেরং বেশ্যারা

এখন নিমতলা কেওড়াতলার দিকে কাঁধে চড়ে চলে যাচ্ছেন ৪৯ জন আরামখেকো লাশ

আমার সেই শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষদের কথা আমি ভাবছি

যিনি এক টাকায় কোল্কাতাকে বেচে দিয়েছিলেন

চিঠি লেখার পর সারা কোল্কাতায় ১টাও ডাকবাক্স খুঁজে পাচ্ছি না

সন্ধে হবার দরুন যাবতীয় নক্ষত্র এখন পৃথিবীর কাছাকাছি নেবে আসছে

আমি আমার রক্ত থেকে জাগুয়ারের চামড়ার রং টেনে তুলতে পার্ছি না

নিজের চামড়ার জন্যে

ঝরাপাতার ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া সাপ আমার দিকে ১বারো চেয়ে দ্যাখেনি

মশার উড়ন্ত ব্লাডারে ঠাসা আমার ক্রুর রক্ত আঙুলে পিষে ঘেন্না কোর্ছে

আমি গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব কোরে ফেলেছিলুম পৈতের দণ্ডিভাসানের দিন

হৃদয়ের জায়গায় ১টা বাদুড় ঝুলিয়ে ফুটপাথ দিয়ে বাড়ি ফির্ছে সফল মানুষেরা

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি দেখেছিলুম আমার দূর গাঁয়ের জ্বলন্ত বাড়িঘর

পাঁজরের শিক দিয়ে কবিতার পান্ডুলিপি গলিয়ে আমি আমার কঙ্কালের ফসিল হবার অপেক্ষায় রয়েছি এখন

প্রথম প্রেমিকার পাঠানো খাম আমি সাহস কোরে খুলতে পার্ছি না

কিছুটা হাঁটার পর পেছনে ফিরে মনঃপুত কুকুরের থাবার ছাপ গুনে নিচ্ছি

দেখছি ১টা ছুটন্ত টপেনের অ্যালার্ম শেকল ধরে ঝুলছর তার সমস্ত যাত্রীরা

জুতোর ভেতরে মোজার ছেঁড়া জায়গাগুলো লুকিয়ে পা ফেলছি এখন

জুতোর মধ্যেই ঘৃণা আর পূজনীয়তা আবিষ্কার কোর্ছে নীতিমেজাজ বিদগ্ধ মানুষেরা

৫.৩৮ ডি.সে. শীতেও আমি আগুন না পুইয়ে ইজি চেয়ারে চুপচাপ শুয়ে রইলুম

নীলার রোঁয়ায় জ্বলা-নেভা ১টা ছোট্ট হাই ভোল্টেজ ঘাম আমার রক্তকে তোল্পাড় কোরে দিচ্ছে

ঘুমের মার্ফত মনে পড়ছে চেনাশোনা উরুগুলোর জাপানি খোলতাই

গাছগাছালির ওপর চিৎ হয়ে আদর খাচ্ছে কুয়াশার দুষ্কৃতিকারী চাদর

নিহত কীটের ২পাশে ঝুলে-পড়া ঠ্যাঙের কাছে ফুলের পাপড়ি শিখে নিচ্ছে স্বীকৃতি দেবার কায়দা

টেলিগ্রাফের ছেঁড়া নলির সঙ্গে ধানক্ষেতে লুটোচ্ছে আর্তসংবাদের হিসেব-করা কাকুতি

পালকসমেত ১-১/২ কিলো মাংসসুদ্ধু বাড়ি ফেরছে ১জোড়া জংলি হাঁস

আমি জান্তে পারলুম না কী কোরে মাটির ভেতরে নিস্পিস কোরে ওঠে বীজের গর্ভচর পোকা

প্রতি মিনিটে ৪০০০০ লোক দুঃখ-কষ্টে ককিয়ে উঠছে কোল্কাতার পথ-ঘাট-গেরস্হালিতে

একাধখেপ লাগাম ছিঁড়ে ছিৎরে বেরিয়ে যাচ্ছে আমার হামলাদার আক্রোশ

নালির পাঁকে হাত-পা চুবিয়ে ঝাঁঝা রোদ্দুরে ১ গেলাস জল খুঁজছি আমি

স্ত্রীলোকের ঠোঁট থেকে এঁটো অ্যালকোহল তুলে আস্তিনে পুঁছে নিয়েছিলুম

এখন এই রাত্তির বেলায় সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর চিৎ হয়ে আলতোভাবে শুয়ে লাজুক মাছেদের শিস শোনার ইচ্ছে হচ্ছে আমার

পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ানের বেলোর ফুটো দিয়ে আমার দিকে উড়ে আসছে লাল উন্মত্ত জোঁকের মিউনিসিপাল দল

সারি-সার- মড়ার শক্ত মুঠো খুলে আমি চকিত বোতাম জড়ো কোর্ছি

বিবরঘাঁটি খুঁড়ে আমার ৪দিকে সঙিন উঁচিয়ে রেখেছে শান্তিকামী মানুষেরা

দাফনকরা লাশের ৮দিকে পিল্পে গেঁথে পেছিয়ে যাচ্ছে অধ্যবসায়ী ঘাস

সাইকোথেরাপি আর বিদ্যুৎশকে বিবাহবিচ্ছেদ রুখে আজকাল সিঁদুরের খরচ বেড়ে গেছে

আমার ২৫বছরের ক্ষয়ে-যাওয়া মজবুত গোড়ালি বাঁক নিয়ে আমাকে ওন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে

কায়েমি স্বার্থের জোট জমিয়ে তুলছি আমি আমার হিসেবি ঘিলুর হুঁশিয়ার খাপখোপে

আমার চামড়ার পাতলা চাদরের নিচে চলাফেরা কোর্ছে আমার কর্মফল

২০৬টা হাড়ের টাল সামলে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছি আমি বৈধাবৈধ এঁটোকাঁটা সমেত

আমার কুরুচিকে আমি লেলিয়ে দিচ্ছি আমারি পেছনে

দুঃখ কষ্ট পাবার জন্যে মানুষেরা লায়েক হয়ে নিচ্ছে

আমার ডান হাতের ছেঁড়া শিরার ভেতর থেকে ভেসে আসছে ২০০০ কঙ্কাল ভাঙাভাঙির সালতামামি

মৃত্যুর টেন্ডার খাম খুলে আমারি ৩২পয়েন্ট হাফটোন ছবি পাচ্ছি

নিজেরি চিঠি নিয়ে নিজের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না ডাকপিওন

নিজের রকএর লাল কেলাসিত টুকরোতে আংটির বাহার কেমন খুলতে পারে আমি ভেবে দেখছি এখন

শরীরের বিভিন্ন জায়গা কাঁপিয়ে শীতকে আমার গায়ে বসতে দিচ্ছি না

ঘুমের ভেতরে আমি শিউরে উঠছি

১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে সত্যি-মিথ্যে

১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে জ্ঞানী আর অজ্ঞান হবার মশলাপাতি

মাছমা২স তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার রক্তমাংস

মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার শুক্রকীট ও কৃমিকীট

মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার মলমুত

মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার চোখের জল

আমাকে মানুষেরা যাকিছু শিখিয়েছে আমি সেসব ভুলে যাবার চেষ্টা কোর্ছি

শীতকাল বলে আমি কোটের নিচে ময়লা শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি

পৃথিবীর প্রতিটি পার্লামেন্টের ল্যাভাটরিতে দৈনিক ৫০০ লিটার রাজনীতি সাংবাদিকদের নজর এড়াচ্ছে

মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে পড়াচ্ছে শৃঙ্খলার গুণ ও হিটলারের আত্মকথা

আমি মলয় রায়চৌধুরীকে একদম বুঝে উঠতে পার্ছি না

দেশ-বিদেশের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুদ্ধবিরতি রেখা

গুনোগাত দিয়ে নাপিতের কাছ থেকে মানুষেরা মেজাজে আদর খাচ্ছে

সমুদ্রের ১তলার হলঘরে মশাল জ্বালিয়ে আমি সাঁৎরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ইং ও বাং ভাষায় আমার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

এখন ভারতবর্ষময় ৯০০০লোক তাদের ছেলেপুলের বিয়ের পণ গুনছে বিবাহ আড্ডায় উবু হয়ে

অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি সমুদ্রের দিকে প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার দিয়ে ফিরে যাচ্ছে ভাঁটায় মার খাওয়া নদীর জল

টেবিলের নিচে ৩৫০০০০ আমলার ঘুষাঘুষময় স্বদেশি পা নেচে উঠছে রোজ

ডাকযোগে উচ্চশিক্ষা পেয়ে ফুলে উঠছে বাঙালি মফসসল

অন্ধকার ঘরে বসে আমি চুপচাপ সিগারেটের আগুন দেখছি

দিনকেদিন আমার কপালে দাগ পড়ে যাচ্ছে

আমার মায়ের গর্ভের ফসফরাস গায়ে লাগিয়ে বিপদসংকেতময় রাস্তা খুঁজে বের কোর্টে চাইছি

তুঁতের ফিকে নীল ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে চলে গেছি ফুটুসের আড্ডায়

অঞ্জলি দিতে গিয়ে আমি আমার হাত ২টো খুঁজে পাচ্ছি না

গাছের ছায়াকে ঘুরে-ঘুরে দেখতে চাইছে অধ্যাবসায়ি রোদ

আমার গায়ের সমস্ত যন্ত্রণা কপালের বিষফোড়ায় জড়ো হয়ে ঘোঁট পাকাচ্ছে

চাঁদের শোষণ ক্ষমতা আমার রক্তের ভেতরে লেলিয়ে তুলছে অমাবস্যা/পূর্ণিমার জ্বর

ওফ

আমার ভালোলাগছে না এই সব

আমি মরে যাব আমি মরে যাব আমি মরে যাব

আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝতে না পেরে ভেতরে-ভেতরে আমার হাড়-গোড় চিড় খেয়ে যাচ্ছে

খারাপভাবে জড়োকরা গা-গতর দিয়ে তৈরি হয়েছে আমার দেহাভিমান

সমস্ত বারন অমান্য কোরে আমি আমার আত্মার কাছে যেতে চাইছি

মাটিতে ভিজে পায়ের ছাপ পড়ছে পায়ের চেটোয় উঠে আসছে ধুলোবালি

অবলা ভিতু জাহাজকে বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে লাইটহাউস

নারীর বেহায়া লজ্জা হাঁটকে আমি বহুবার শিতকাল-গ্রীষ্মকাল ঠাওর করেছি

স্ত্রীলোকের চেয়ে ইউরেনিয়াম আজকাল বেশি দরে বিকোয়

আণবিক ফোড়া কম্প্রেস করা হল বিজ্ঞান

শুক্রকে রজঃকীটের সঙ্গে মেলামেশা কোর্র্তে না-দেয়া বিজ্ঞান

নারীর গর্ভকে অকেজো কোরে দেয়া মানে বিজ্ঞান

কেন পৃথিবীর মাটিতে আপেল নেবে আসে আমি জানলুম না

আমি গ্রন্হের বদলে মানুষকে দিয়েলুম জুতোর খালি বাক্স

নিজের খোঁজে ফিরে এলুম মেখলিগঞ্জ থেকে ধাপড়াহাট

১জন হাফ-চেনা নারীর খোঁজে চলে গেলুম ধরমপুর থেকে পিপারিয়া

আমি ভোটের বাক্সের কাছে গিয়ে বুঝতে পারি হাত ২টো বাড়িতে ফেলে এসেছি

১ম/২য়/৩য় শ্রেণির ঠিকাদারের পাঠানো কাঠ পোঁছে যাচ্ছে শ্মশানে

লোথিয়ান দ্বীপ বা পাঙাসমারির চরের ওপরেও ছড়িয়ে থাকে বিলাতফেরত মানুষির উরুর হাড়া

আমি দেখলুম হাতঘড়িতে পরিয়ে-রাখা দরদি কান্নামোছা হাত

আমি নালির পাঁক থেকে রংওঠা বেলুন তুলে ফুলিয়েছিলুম

পাখির গু থেকে বীজ বেরিয়ে এসে দেয়ালে জন্মাচ্ছে বিশাল বট

এখন আমি প্রত্যেকটা ব্যাপারের শব্দ শুনতে পাচ্ছি

আমি আমার নিজের পাশে শুয়ে নিজেকে ভালোবাসলুম

ইউলিয়াম ব্লেকের সঙ্গে শুয়ে রইলুম আঙুরমাচানের নিচে

হুইটম্যানের চটের ওপর শুয়ে মৌচাক থেকে বাড়তি মধু ঝরে পড়ার গম্ভির শব্দ শুনলুম

নীলার লেপের নিচে শুয়ে আদ্দেক রাত্তিরে উঠে এলুম নিজের ঠান্ডা বিছানায়

জীবনানন্দের বিছানার খোঁজে রাসবেহারি অ্যাভেনিউর ফুটপাথে ছুটোছুটি কোর্লুম ঘুমন্ত অবস্হায়

খবরের কাগজ থেকে শিখেছি দেশপ্রেম

কৃতী পুরুষদের হিড়িক এড়িয়ে চলে এলুম ২৫ বছর

আধঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে নিজের গলা টিপে বন্ধ কোরে দিলুম কুকুরের গরররর চোখরাঙানি

মানুষ হওয়ার দরুনই আমাকে খাবারের দোকানে লাইন দিতে হল

আমি কেন মানুষের মারপ্যাঁচে আটকে রইলুম জান্তে চাই এবার

পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞানশূন্য হবার জন্যে আমি কানের তুলো ঝেড়ে খুঁজে দেখছি প্রথম কাঁকর

নিজের শরীরের কেরাসিন বাঁচিয়ে রাখতে হয় চিতার বিছানা ওব্দি

সিমেন্টের মেঝের ওপর বালি ঘষার শব্দে আমার দাঁত শিউরে উঠছে

আমি কর্তৃত্বাভিমানকে লাথি মেরে চলে এলুম নিজের হৃদযন্ত্রের কাছে

নিজের হৃৎপিন্ডের ওপরে রাখলুম আমার ২৫বছরের ঘেয়ো ময়লা হাত

শরীরের ৯টা দরোজা খুলে রেখে ২৫বছর কেবল টুথব্রাশের ব্যবহার কোর্লুম

পুরোনো দেয়ালের কাছে দুহাত পেতে নিলুম নোনা ইঁটের ঝুরো ব্যর্থতা

দরোজার খিল এঁটে মাঝঘরে হাঁটু গেড়ে বসে রইলুম ইহলৌকিক গায়ের মধ্যে

স্টোভের পোকার দিয়ে খোঁচাতে হল আমার গায়ের সবকটা উদ্বিগ্ন লোমমুখ

আসল সঙ্গীত শোনার জন্যে জেলের দেয়ালের ইঁট এনে তার ওপর কান পেতে শুলুম

অসীম বলতে আমি বুঝছি আমার নিজেরি গায়ের চামড়া

আমার সামান্য ফুঁ-এ

পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থের অক্ষর উড়ে তালগোল পাকিয়ে যায়

প্রেমিকার বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে আমার আঁচানো হল না

ভিষণ শীতেও আমি ৩-১/২ ঘন্টা বাথটাবের ঠান্ডা জলে শুয়ে গাবের গরম তুলে ফেলতে পার্লুম না

মদ খেয়ে মাতলামো সারিয়ে তুলতে গেলুম খালাসিটোলায়

আজো আমার বোঝা হল না সুখ-দুঃখের আসল তফাত

আত্মার পচন নেই বলে আমি নিজের আত্মা ফেলে দিতে চাইছি

চোখ বুজে দেখতে পাচ্ছি মায়ের গর্ভের গোলাপি রং

শরীরের চাদ্দিকময় ২৫০০০আঁতের অতিসূক্ষ্ম ঝুরি নেবে রয়েছে

রেডিওয় থিয়েটার শুনে কেঁদে ফেলছে কোল্কাতার নরমহৃদয় মানুষমানুষী

গাদাগাদি কোরে বিয়োতে-বিয়োতে গাঁ-মাঠ-পরগণার দিকে ছুটে যাচ্ছে কোল্কাতা

অস্হির রাস্তার ২পাশ দিয়ে পেছোচ্ছে স্হির গাছপালা

উচ্চারিত কথার গা থেকে কার্বনডায়ক্সাইড শুষে নিচ্ছে গাছের ভিনিগার

বোবা গাছ থেকে অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে বাজার দরের চেয়ে অনেক সস্তায়

টাকাপয়সার জন্যে আমি ভবিষ্যত জমিয়ে রাখতে পার্লুম না

অনেক পুতুলেরও নীতিবোধ চাগিয়ে উঠছে আজকাল

মশারি টাঙাবার পর আমার ঈর্ষাবোধ চাগিয়ে ওঠে

ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখতে আমার ভালো লেগে যায়

পঙ্গপালের ঝাঁকের পেছনে উড়ে যায় ৮০০০০০ উদবোধনকারী মন্ত্রী ও তাদের কাঁচির দঙ্গল

প্রাচীন মায়াপুর থেকে উড়োখামে চলে আসে ভারি আর বেয়ারিং ভালোবাসা

শীতের জন্যে রঙিন কাপড়ের ট্রুজারের ভেতরে উলঙ্গ হয়ে ঢুকে আছি

গায়ের সবকটা তিল আর আঁচিল ক্রমশ এঁটুলিতে বোদলে যাচ্ছে

দুমকার গেরুয়া কাঁকরের ওপর দিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে মাথা ঠিক কোরে নিতে চেয়েছিলুম

এখন আমি এক এক কোরে ওড়াচ্ছি আমার রক্তমাখা চোখ

গাছের গায়ের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে খিল দেরাজ ফাঁসিকাঠ

আমি এখন তৈরি কোর্ছি ৩য় বিশ্বযুদ্ধের খসড়া খেয়োখেয়ি

ভিড়ের ভেতরে ঢুকলে কনুই ২টো নিয়ে যেতে হয়

কোল্কাতার প্রতিটি রাস্তায় পড়ে রয়েছে ধ্বস্তাধ্বস্তির মুনাফাকারী চিহ্ণ

লাইসেন্স করানো বেড়াজাল গিয়ে পড়ছে তোপসের কমার্শিয়াল আড্ডায়

সমদ্বিবাহু ঢেউদের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ নৌকো

শুশুক ডুবে যাবার পর ঢেউদের আঢাকা গর্ভ আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

মানুষদের বাড়িতে বেড়া লাগানোর দর্কার হয়ে থাকে সভ্যতার সার্টিফিকেট হিসাবে

আমি যেখানেই বোসছি ঘরের প্রত্যেকটা ছবি আমার দিকে তাকাচ্ছে

মুখের ওপর স্ত্রীলোকের মুখ চেপে ধরে ডাবের ঠান্ডা জল খাবার ইচ্ছে হচ্ছে এসময়

স্নানের পর নীলার শীতল আর নরম চামড়ার কচি আতর ভেসে আসছে

ঘুম থেকে উঠে দেখছি সারা শরীর ছড়ে গেছে

ভারি বুট পায়ে অন্ধকার গলির মধ্যে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমার নৈতিক আত্মহত্যার খুনখারাপ আততায়ী

আমার শরীরে এখন চোলছে কেপমারি খুনজখম রাহাজানি ছিন্তাই

আমার হাত-পা দিয়েই আমাকে সকলে মিলে পেটাচ্ছে

দেয়ালে কপাল ঠুকে কাঁদার জন্যে জেরুজালেম ওব্দি চলে যাচ্ছে মানুষ

পরমাণুশক্তির উন্নয়ন সত্বেও হারানো ছেলেরা ভেসে উঠছে পচা ডোবায়

তমসার কাছে মৃত্যু ভিক্কে চাইতে গিয়ে লুকিয়ে ফিরে এলুম

মলয়ের বুকের বাঁদিকে ছোরা বসিয়ে খুঁজলুম তার দেহাত্মবিবেক

পৃথিবীকেও মাঝে-মাঝে কেন অচেনা লাগে জানি না

রোগির গলা ফুঁড়ে গ্লুকোজ যাচ্ছে আবার তাকে হিঁচড়ে রাস্তায় নাবিয়ে জীবনের ধকল সওয়ানো হবে বলে

আজ জানি না কেন ১জনকে মৌলালিতে মারা মানে খুন রাজশাহিতে মারা মানে দেশপ্রেম

ভালো মানে ভালো কিনা বুঝে নিতে আমি আকন্দের রোঁয়ার সঙ্গে ঘুরে বেড়ালুম

কিছুদূর ঠেলে নিয়ে যাবার পর মানুষেরা স্টার্ট নিচ্ছে

শ্বেত পাথরের ঠান্ডা মেঝেয় উদোম গায়ে শুয়ে থাকার ইচ্ছে হচ্ছে এখন

হ্যাঙারে গাবের চামড়া ঝুলিয়ে রেখে নিজের কঙ্কালের মধ্যে ঘুমোলুম ২৫ বছর

আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি লোভ আর ঔদাসীন্য

আমি মায়ের কাছে পেয়েছি মোক্ষম ক্রুরতা আর ক্ষমা আর আত্মস্বীকার

বা২লাদেশকে চিরে দেয়া লাইনটাকে তুলে হি২স্র তেলচুকচুকে চাবুক কোরে নিয়েছি আজ

চোখের সামরিক রক্তে

ক্রোধ জমছে ধিকিয়ে-ধিকিয়ে

ভারতবর্ষের ১০৮দিকে আমি নিস্তারহীন নজর রাখছি

খারাপ মানে খারাপ কিনা জেনে নিতে আমি ছাপাখানার মেশিনের ময়লায় লুকিয়ে রইলুম

ওফ

প্রতিহিংসা জের্বার কোরে তুলছে

নিজের সঙ্গে শলাপরামর্শ এঁটে ঠিক কোর্ছি কী কোরে প্রতিশোধ নেয়া যায়

এক-একটা চোটে ফেটে গুঁড়িয়ে যেতে চাইছে আমার কঙ্কালের সমঝদার ঘরদোর

আক্রমণের আগে আমি ২দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছি

ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবার পর আমি উঠে দাঁড়িয়ে ফুঁসছি আর গর্জাচ্ছি

বালামচি দিয়ে চোটজখম ঝালাই কোরে স্রেফ ন্যাটা হাতে লড়ে যাচ্ছি ২৫ বছর

সমস্ত-কিছুর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যে আমার চোখমুখ থমথম কোর্ছে এখন ।।

দে গোরুর গা ধুইয়ে

আররে ইসলামভাই —

আদাব। প্রণাম। সৎশ্রী আকাল। গুড ডে।

বোমা ও বউমা শাসিত ভুঁয়ে পা ছড়িয়ে দিব্বি শুয়ে আছো।

লকলকে অন্ধকারে। এ এক চমৎকম্মো । কোনো দিকে দিক নেই।

ন্যুব্জ লোচ্চার ভিড়ে। মনীষা-জর্জর ঘোঁটঘটকের আলজিভবিহীন গোরে।

বা হয়তো বহু আলজিভ নিয়ে। খালিপিলি।

ইসলামভাই। বোবার গুষ্টি ছাড়া আর কেউ হলপ করে না।

চিতশোয়া আছো বেশ। ইলশেকোমর বংললনারা তোমার গোরে গিয়ে গান গায়।

কী গান? না, ‘অর্থালংকার দাও ভঁয়সামর্দিনী’।

রাধাক বুলিলঁ ঢপকথা । ঢপের আকাল নেই এপারে-ওপারে।

দেখা আর হল কি তবুও? ঠ্যাঙের জ্যামিতিনাট্য? ভেনিশিয় অন্ধ জানালা?

আররে ইসলামভাই —

মধু হেম রবি দ্বিজু সতেদের ছেড়ে তুমি কবরে সিংহাসন পেলে।

ভালোই তো । লুচ্চাতিলুচ্চারা আছে জমির ওপরে। ফংগবেনে। টেলিসুন্দুরীর গ্যাঞ্জামে।

বুভুক্ষুদের কুরে-কুরে খেল ওরা। শিবের জটায় দেখো মরাসোঁতা ধারা।

ভেজালকান্তিদের পেপিগান। করতালি কুড়ানিয়া উচাটন। বাতেলানন্দিত।

জেনে রাখো: ‘অশনি সংকেত বলতে কিছু বাকি নেই’।

ষাঁড়াষাঁড়ি বৃংহণে সবায়ের কান কালা। চুল্লুচনমনে আলো। দুদেঁড়ে বিন্দাস।

ভুতুড়ে পাঁকের গর্ত ঠ্যাং ধরে টানে। কিন্তু উপায় নেই। কী করি? কী করি?

কি করে বোঝোনি ইসলামভাই —

বীণার আগুনে তুমি নিজেকেও পোড়াবে! ঘিরে ফেলবে বাকশেয়ালেরা!

গয়ংগচ্ছতি যুগে? বোবা স্বরবিতানের চিকনিচিজ লাফড়ামথিত কালে ?

বুঝলে ইসলামভাই। সবাই বিন্দাস আছে। আকখা ভারতে।

দুর্গম গিরি কান্তার মরু ত্রিস্তর ভোটাভুটি ! কবিতাও , বোলে তো ছক্কাস !

অবশ্য একটা ভালো । ধন্য হবার জন্যে এটুকু বেঁচেছে । তা-ও মন্দ কী !

ভর্তুকির জন্যে শুক্রিয়া ।

আদাব ইসলামভাই । প্রণাম । সৎশ্রী আকাল । গুড ডে।

অবন্তিকার শতনাম

আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া…বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়…ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে…বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী…বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে…ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ…ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই…ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই…যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়…প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়…পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না…যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম…অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো…পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই…কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য…তাহলে ভগাঙ্কুরের…ও বলল সেটা আবার কি জিনিস…ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো…পান্তুয়া চলবে…ধ্যুৎ…রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়…ছানার পায়েস…নারকেল নাড়ু…রসমালাই…নকশি পিঠা…রাজভোগ…লবঙ্গলতিকা…হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়…আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা…ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে…হ্যাঁ…এগোই…পাছার কি দুটো নাম হবে…ডিসাইড কর…ডিসাইড কর…তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না…না না ফের ফের…লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী…পারফেক্ট হয়েছে…তাহলে পাছার একটাই নাম দিই…নরম নরম কোনো নাম…পাসওয়র্ড…ঠিক…এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড…ধ্যাৎ…পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস……গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন…ছিঃ…তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি…গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে…ওক্কে…তারপর…ঘুমোবো কখন…বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া…ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া…রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না…ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে…শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে…না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়…ছাড় ছাড়…এগো…মানে নামতে থাক…তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো…তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ…বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ…এবার ওপরে আয়,,,মুখে…ঠোঁট…ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি…আচ্ছা…ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি…ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো…খাস…থুতনিতে সেকেন্ড চিন…পিৎজা কোক খাওয়া থামা…থুতনির নাম দিই গোলাপজাম…কেন কেন কেন…পরে বলব…এখন দুচোখের নামদিই…শতনাম হলো না তো…চোখ বোজ চোখ বোজ…তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার…তাহলে আয়…আজ তুই ওপরে না নিচে ?

আমার জিগরি দোস্ত ফ্যাটুল চিঠিপাধ্যায়

দোষ-নির্দোষের মাঝে আটক  আমার জিগরি দোস্ত ফ্যাটুল চিঠিপাধ্যায়

ওর হাঙরহাসি মুখ ভেঙচে বাছুরের চামড়ায় বাঁধানো ভাগবতে

হাত রেখে শপথ করেছিল যে, ফাঁকা চেয়ারটায় যে-অদৃশ্য লোকেরা

বসে থাকে তাদের বলবে: ‘সময় ব্যাটাই বন্ধু সেজে ভয় দেখায়’

কাঠঠোকরার বাসার ফুটোয় ঝড়ের ঢঙে ঠোঁট রেখে বাঁশি বাজাচ্ছিল ফ্যাটুল

বেচারার বগলে ঘামের কাতুকুতু ছাড়া জীবনে আর কোনো আহ্লাদ ছিল না

ভালোবাসার লোকজন একে-একে হাপিশ হবার পর নিয়তির তাড়া খেয়ে

ইতিহাসেই আছে উত্তরণ জেনে বাদুড়রা যখন ওর মাথা ঘিরে ঠাঠা হাসছে

নিজের কুকুরকানে শুনল: ‘সময়ের মতন মানহানিকর বজ্জাত কেউ নেই’

যে-লোকই পাশে শুয়ে শ্বাস নিয়েছে সেই দেখি অসৎবাজ বেরিয়েছে

গ্রন্হকীটের পরাগমাখা রূপোলি আঙুল বুলিয়ে ভেবেছে শব্দই স্রেফ সার্বভৌম

বাদবাকি লোকেরা কান্না ফুরোবার অপেক্ষায় শবখাটের বাহক

বেচারা জানত না অর্কিড শব্দটা গ্রিক অর্কিস মানে অন্ডকোষ থেকে এসচে

তাই জগৎটাকে চিরকাল দেখেছে ছাড়ানো নারকেলের মরচেপড়া চোখ মেলে

অভ্রপুষ্প

মোচড়খোলা আলোয় আকাশকে এক জায়গায় জড়ো করে

ফড়িং-ফোসলানো মুসুরিক্ষেতে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন বোলডার-নিতম্ব কবি

মরাবাতাসের বদবুমাখা কন্ঠস্বরে ঝরছিল বঁড়শিকেঁচোর কয়েলখোলা

গান থেকে এক-সিটিঙে সূর্যের যতখানি রোজগার

শেষ হয়ে যায় মধু দিয়ে সেলাই করা মৌচাকে মোতায়েন জেড ক্যাটাগরির

ভোঁদড়ের খলিফা-আত্মা সামলাতে

প্রদূষণ বিরোধীদের দিকে ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের হাসি চুয়ে পড়ছিল

লিপস্টিক-বোলানো গোধূলি থেকে চুলকুনি-জালে বানানো চামড়ায়

ভুটভুটির মাঝি-মেকানিক তখন ফ্রিজের কুমড়োর শীতঘুম থেকে উঠে

দু-চার ক্রেট নদী ভরেছে ডতপেনের নীল শিরদাঁড়ায়

যার ফলে আঙুলের ডগায় লেগে থাকা স্মৃতিতে খুঁজে পাওয়া গেছে

হারানো চাবির বিকল্প এক আয়ুর্বেদিক জ্যোৎস্না

মাথার ওপর বয়ে নিয়ে চলেছে বোরখা-ঢাকা মেঘের মধ্যে

পালক-খোলা টিয়াদের জোয়ারে হেলান-দেয়া গেঁহুয়াপিঠ ঢেউ

আড়কাঠি

নিজেকে কীভাবে মুক্ত আমার কবিতা থেকে করি !

না হয় উজিয়ে যাই বঙ্কিম চাটুজ্জে থেকে ফ্যাতাড়ু কাঙালে

মগজে-মজ্জায় ছিঁড়ি হাতির পায়েতে বাঁধা মদনা শেকল

ক্যাকটাসি স্মৃতি থেকে ছেঁটে ফেলি রিরিদেহী প্রেম

গঙ্গায় চুবিয়ে মারি পেটমোটা ব্যাকরণ অভিধান নথি’

যেসব জিওলকথা ওৎপেতে মুখিয়ে উঠেছে ডটপেনে

তাদের কস্তাপেড়ে রামগিঁটে বেহরম টুঁটিটিপে বেঁধে

তেতোলগ্নে ফেলে আসি ধাপার অরগ্যানিক ঘুমে ।

 

যতবার জেল ভেঙে পালাবার ছককষি, আয়নার পারা

পাকড়াও করে এনে চিহ্ণের গারদে পুরে ন্যাড়া করে দ্যায় ।



ক্যানসার

আত্মরতির স্নেহে ক্ষয়ে গেলি মুখপুড়ি, নিজেরই অন্তরতাপে পুড়ে

বুকের অর্ধেক মোহে, চেয়ে দ্যাখ, দ্রবণে চোবানো ভাসমান

যদিও সে রাতে তুই বলেছিলি, আমার ছোঁয়ার দোষে ধরেছে কর্কট

ছেয়ে গেছে প্রিয় মাংসে প্রেমিকের অমৃত ভাঁড়ার

বিষণ্ণ সুখের হিম ভাগ করে দিতে চাস তাই ; কে নেবে তা ?

ভেবে দ্যাখ , মনে কর , আগের প্রেমিকগুলো চুমুতে বিষাদ ভরে

শেয়ালকাঁটার রেণু তোর ফুসফুসে ফেলে সটকে পড়েছে

যাদের সঙ্গে তুই বাঁ হাতে শ্যামপেন ধরে নাচতিস ডিসকো-মাতাল

কিংবা হয়তো তুই তিমির চর্বিতে তৈরি লিপ্সটিক মেখেছিলি ঠোঁটে

তিমির পোয়াতি কান্না কাঁকড়ার বুদবুদে লিখেছে সবুজ প্রতিশোধ

কাকে কাকে কতোবার বলেছিলি অবন্তিকা, অর্ধনশ্বরী সুরে

ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি লাভিউ লাভিউ লাভ ইউ….


অরুণেশ ঘোষকে লেখা একটি কবিতাপত্র

একে কি কাকতালীয় বলব ? নাকি আপনি যেরকম লিখেছেন

স্পাইরাল ইতিহাসে পাক খেয়ে ঘটে-চলা অন্তর্বয়ন ? অরুণেশ ?

কেমন অদ্ভুত সত্যি ! অপঘাতে মৃত্যু হল আপনার উসযাপন করে

পঞ্চাশ বছর পূর্তি । পঞ্চাশ বছর! উনিশশো একষট্টি সনে

আমরা ক’জন মিলে, এ-সময় নাগাদই, বিলি করে তাক লাগাই

কলকাতার বিদ্বান বুদ্ধিমান বিদ্যায়তনিক আর ততোধিক

গম্ভীর প্রশাসক সম্পাদক ঝোলা-কাঁধে কমরেড-দাদাদের,

ফালিকাগজে ছাপা ইংরেজি ভাষায় লেখা ম্যানিফেস্টো কবিতার।

তখনও আপনাকে আমি দেখিনিকো আর এখনও আপনাকে

দেখতে না পারার দুঃখ, আপনার সাথে মুখোমুখি পরিচিত

না হবার দুঃখ, আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা আপনারই কাছে

শুনতে না পারার দুঃখ, রয়ে গেল অরুণেশ । কেমন দেখতে ছিল

আপনাকে তরুণ বয়সে ? কেমন সে কন্ঠস্বর ? আপনি যখন আপনার

ঘনিষ্ঙ বেশ্যাদের পাশে বসে ফিসফিস করতেন, শুতেন তাদের সাথে !

জানি না কেমন হয় পশ্চিম বাংলার গেঁয়ো বেশ্যারা। হয়তো জানেন

আমি তো চিরটাকাল যাদের বেসেছি ভালো, শুয়েছি যাদের সাথে

তারা সব পৃথিবীর মহানগরের নারী, ইংরেজি ভাষায় যারা

ভালোবাসাবাসি করে, বিদেশি পারফিউম মেখে, দামি অন্তর্বাস খুলে

আলোকে লজ্জা দ্যায়। জানাই হল না আপনি স্হানিক বুলিতে

মজে কখনও আপনার গ্রাম ছেড়ে বেরোতে চাননি কেন–

অথচ দেখুন, মফসসল থেকে প্রায় কবিরা সবাই যান কলকাতায়

পাওয়া ও পাইয়ে দেবার ঘাঁটি সেখানেই রয়েছে মনে করে । এমনকী

আপনার প্রিয় জীবনানন্দ কিংবা আর্তুর র‌্যাঁবোও থাকতে চাননি গ্রামে।

এখন আপনার ফোটো দেখছি ইনটারনেটে, পাকা চুল বুড়োটে মানুষ

পুকুরে নেমেছেন বা সবুজ দিগন্তে ঘেরা খাটে বসে আদর করছেন

সংগ্রহের বইপত্র। গ্রামেতেও বসে কোথায় পেতেন প্রিয় বইগুলো

হাল আমলের সব বিদেশি লেখক আর কবিদের ডায়েরি ও বই ?

বহুবার আপনার খোঁজ করে বইমেলার স্টলে মাঠে

পাইনি আপনার দেখা। উত্তরবঙ্গ থেকে আসতেন নাকতলায়

আমার বাসায় যাঁরা তাঁদের কাছেও আপনার কবিতার গল্পের

কত কথা হত অথচ আপনার সাথে আলোচনা না করতে পারার

কোনো সুযোগই হল না । বোধহয় আমরা দুজনে দুই বিপরীত

মেরুর রাস্তা ধরে চলে গেছি দুই দিকে– আপনি সবুজ গ্রামে আর

আমি ছোটো শহরের গলি ছেড়ে আরও বড় শহরের ৪০-৫০ তলা

বাড়ির পাড়ায় যেখানে রাতের বেলা জেগে থাকে বাস-ট্রেন

সুপারহাইওয়ে জুড়ে চ্যাঁচামেচি গাড়ি জ্যাম বিরক্ত আলো।

আপনার লেখা পড়ে ভেবেছি অনেকদিন আপনি কি সেই

‘মেলাঙ্কলি ম্যান’– ভ্লাদিমির এসট্রাগনের কাঁধে হাত রেখে যিনি

রাজা লিয়ারকে বলছেন, চোখ খোলো তাকাও জীবনের পানে

হে এলিজাবেথ, হে মুখপুড়ি ব্রেন্টানো, উদ্বুদ্ধ করো গো এবার

বিঠোফেন শুমান ও ব্রাহমসের বাদ্যলিপিগুলো ওইখানে গিয়ে

ওই সিংগুরে ওই নন্দীগ্রামে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ এক কবির লেখায়…

 

ডিসটোপিয়ার দেশ

হাজার ঘোড়ার পালের সঙ্গে ‘আমি’ হাঁটতে চেষ্টা করছে, বে-লাগাম

ঘাড় দুলিয়ে, ঘুটঘুটে চটচটে সুড়ঙ্গে

লাগাম আছে জিন আছে

রয়েছে একটামাত্র ‘আমি’ ঘোড়া

গুঁতো মেরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে কালো অন্ধকার সুড়ঙ্গে

বাদবাকি ‘আমরা’ গাধা, ‘আমরা’ খচ্চর

নিজেকে ‘আমি’ বলা বারণ তবু আমি আমাকে ‘আমি’ বলছে

সিংহাসন বলেছে সবসময় নিজেকে ‘আমরা’ ভাবতে হবে

ভিতু উদ্বিগ্ন বিধ্বস্ত মানুষ-মানুষনির মতন দেখতে ‘আমি’কে

ফুটন্ত রক্তের আলকাৎরার ওপর দিয়ে, অন্ধকারই একমাত্র আলো

‘আমি’  অনেক ‘আমরা’র সঙ্গে হাঁটছে

কেউ জানে না কোথায় যাচ্ছে, ঘাড় দুলিয়ে

পাশাপাশি আর সার বেঁধে

কেউ জানে না শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছোবে

বেশ কয়েকজন ঘোড়া গাধা খচ্চর মাঝপথ থেকে পালিয়েছে

এই আশায় যদি ফিরে গিয়ে জেব্রা হতে পারে

‘আমরা’ কারোর কান নেই মুখের ভেতরের অক্ষর-বাক্যরা

গণ্ডোয়ানার সময়ে ফিরে যেতে চাইছে, ঘোড়ারা জানে না তারা ঘোড়ারদল

খচ্চরেরা ভাবছে তারা ঘোড়া, গাধারা ভাবছে তারা খচ্চর

চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ করতে থাকবে, অন্য আওয়াজ কেউ শুনবেনা 

শব্দেরা ‘আমরা’ খচ্চরদের পাত্তা দেয় না

বাক্যরা ‘আমরা’ গাধাদের তোল্লাই দেয় না

এরকম  সময়ে লেখা-গান-ছবিতে শয়তানি করতে পারবে না ঘোড়ারা

তাই বাদবাকি ঘোড়ারা পেছন ফিরে ল্যাজ তুলে দেদ্দৌড় দিয়েছে

তারা কি মারোয়াড়ের ঘোড়া, তারা কি বাবরের ঘোড়া

তারা কি চেঙ্গিজ খানের মোঙ্গোলিয়ার লোমশ ঘোড়া

তারা কি লালন সাঁইয়ের ঘোড়া, যিনি লিখেছিলেন

“আমার মন বেবাগী ঘোড়া

বাগ ফেরাতে পারি না দিবারাতে

মুরশিদ আমার বুটের দানা

খায় না ঘোড়া কোনোমতে

বিসমিল্লায় দিলে লাগাম

একশোত্রিশ তাহার পালান

হাদিস মতে কশনি কসে

চড়লাম ঘোড়ায় সোয়ার হতে

বিসমিল্লায় কিন্তু ভাবি

নামাজ রোজা তাহার সিঁড়ি

খায় রাতে দিন পাঁচ আড়ি

ছিঁড়ল দড়া আচম্বিতে

লালন সাঁই কয় রয়ে সয়ে

কত ঘোড়া সোয়ারি যাচ্ছে বেয়ে

পার পাব কি আছি বসে

শুধু আমার কোড়া হাতে”

নাকি তারা জীবনানন্দের ঘোড়া, যিনি লিখেছিলেন

“আমরা যাইনি মরে আজও - তবুও কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়

মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে

প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন -- এখনও ঘাসের লোভে চরে

পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর ‘পরে

আস্তাবলের ঘ্রাণ ভেসে আসে একভীড় রাত্রির হাওয়ায়

বিষণ্ণ খড়ের শব্দ ঝরে পড়ে ইস্পাতের কলে

চায়ের পেয়ালা কটা বেড়ালছানার মতো - ঘুমে - ঘেয়ো

কুকুরের অস্পষ্ট কবলে

হিম হয়ে নড়ে গেল ওপাশের পাইস রেস্তঁরাতে

প্যারাফিন লন্ঠন নিভে গেল গোল আস্তাবলে

সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে

এইসব নিওলিথ স্তব্ধতার জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে”

নাকি ঘৌড়দৌড়ের আন্দালুশীয় ঘোড়া

ঘোড়া কেবল রেসের মাঠে জুয়া খেলায় কাজে লাগে

ফলে ডিসটোপিয়ার দেশে

বেঁচেছে কেবল কালো রঙের ‘আমি’ ঘোড়া

অথচ ‘আমি’র রক্তে শয়তানি, ‘আমি’র মজ্জায় মজ্জায় বজ্জাতি

প্রতিটি শব্দ বাক্য অমৃতমন্থনের ধোপার পুঁটলি থেকে বেরিয়েছে

দেবতাদের অসুরদের ঘোড়াগাধাখচ্চরের পুঁটলিতে তফাত নেই

সেগুলো রয়েছে রঙহীন ছবিহীনতার নাইলন-দড়িতে বাঁধা

ঘোড়াগাধাখচ্চরের  জন্য  রেখা টেনে দেয়া হয়েছে তা তারা ডিঙোবেনা

‘আমি’ লোকটা ডিঙোয়, তার থেকে দূরে থাকে অন্য 

‘আমরা’ গাধা ‘আমরা’ খচ্চররা

খচ্চরক্যাচাল ভালোবাসে খচ্চরদলদাস

ভগভোগ করার ধান্দায় মাতে মর্ত্যচুম্বী শ্যামলিঙ্গের গাধাক্যাডার

জগতসংসার এই বাকভেড়ুয়া গাধা-খচ্চরদের ইউটোপিয়া 

সিংহাসন হুকুম জারি করেছে

কোনো ঘোড়াগাধাখচ্চর একা নিজের মতো করে চিন্তা করবে না

বেফাঁস চিন্তা করলেই শাস্তি

সিংহাসনের ঘাসখোর রোগাটে লেঠেল-খচ্চররা আছে

পাঠশালায় মুখস্হ তেইশ আর চব্বিশ অনুচ্ছেদ

মগজে পুরে দেয়া হয়েছে  আলকাৎরায় তৈরি অজস্র তুলতুলে জোঁক

সিংহাসন বদলালেও ‘আমি’ বলা চলবে না

কর্নওয়ালিসের চিরস্হায়ী বন্দোবস্তের  লেঠেলদের সন্তানগাধা

নীলকর সাহেবদের পোষা বেজন্মা খচ্চরসন্তান মাস্তান

অন্ধকার যুগের জন্মান্ধ গাধার দল, বেজন্মা খচ্চরের পাল

তারা  জানতে পারে না শান্তিভঙ্গের চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ শব্দবাক্য কেন  দোষাক্ত

অমুক ধারা তমুক উপধারা  লোহার অক্ষরে লিখে গেছে ম্যাকলে 

সেই অন্ধকার কানা সুড়ঙ্গ তাদের মুক্তির হাইওয়ে

গাধারা একা থাকলেই চিন্তা করবে বলে ওদের দল গড়া হয়েছে

খচ্চররা একা থাকলেই দুষ্টচিন্তা করবে

একা থাকলেই ‘আমি’ হয়ে উঠতে পারে

হয়তো পারে কিন্তু গাধা, তাই হয় না

যে খচ্চররা হয়, তারা তিলেখচ্চর

ঘোড়ারা মহাকাব্যের সময় ছিল, তারা ‘আমি’ ঘোড়া হয়ে যুদ্ধ লড়েছিল

কোনো ‘আমি’ যুবতী দেখলে ভালোবেসে ফেলতে পারে

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলছিল তখনও 

কৌরবদের ঘোড়ানিকে ভালোবেসেছে পাণ্ডবদের ঘোড়া

দেশভাগের দাঙ্গায় পালাতে-পালাতে দেখেছে ঘোড়া-ঘোড়ানি প্রেমে মশগুল

চেঙ্গিজ খানের নির্দেশ মানেনি প্রেমিক ঘোড়া

স্তালিনের হুকুম মানেনি প্রেমিকা ঘোড়ানি

পিনোচেতকে অমান্য করেছে তারা

‘আমি’ ঘোড়াকে তাই পাঠানো হচ্ছে অন্ধকার যুগে

অন্ধকার যুগে ‘আমি’র সঙ্গে ‘আমি’র ভালোবাসা নিষিদ্ধ

একা চিন্তা করার চেষ্টা করলেই ল্যাজে সংশোধনের আগুন বরাদ্দ

সেখান থেকে রোগাটে খেঁকুরে অসুস্হ হয়ে ফিরবে দেগে-দেয়া 

লেঠেল-গাধা আর ক্যাডার-খচ্চর

ছাত্র-খচ্চর আর ছাত্রী-গাধা

নয়তো আড়ঙ ধোলাইকারীদের হেফাজতে

খচ্চর আর গাধাদের চরিত্র আর শরীর বইতে বাধ্য মানুষ-মানুষনিরা

সিংহাসনের হুকুম

ক্ষমতার বিরুদ্ধে ‘আমি’রা  লিখবে না, গাইবে না, ভাববে না

অদৃশ্য নোটিস ঝোলানো আছে রক্তপেছল সুড়ঙ্গের হাইওয়েতে

লেখায় আঁকায় গানে অপরাধ নিষিদ্ধ

অন্ধ-বোবা-কালা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে না

স্কুলে মুখস্হ উনিশ কুড়ি একুশ বাইশ অনুচ্ছেদ

মানুষের হাড়-মাংস দিয়ে গড়া গাধা আর খচ্চর

পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফাটল দিয়ে পুঁজের ধারা

                                     ‘আমি’র  চার পায়ে রক্তের চটচটে আলকাৎরার গোপনীয়তা

চালিয়ে যেতে হবে শয়তানির হ্রেষা হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ

যদিও শিক্ষকরা আর নেতারা হুমকি দিয়ে চলেছে

একটু নড়নড় করেছো তো তোমার একদিন কি হুকুমের একদিন

‘আমরা’ গাধার দল মুখ বন্ধ রেখে ওনাদের মা-বাপের গাল পাড়ে

‘আমরা’ খচ্চরের পালও তাই

কেননা ‘আমরা’ গাধারা সৎ চিন্তার দরুণ অভিশপ্ত

‘আমরা’ খচ্চরেরা খচরামি করতে পারে না

মাটিতে ছায়া পড়লে ওরা কুড়িয়ে নিয়ে  ‘আমির’ বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে

গাধার আবার ছায়ার গর্ব, অ্যাঁ, ‘আমি’ হবার বায়না

গাধাদের কবর হলো তাদের অক্ষর আর বাক্যের হারানো গোরস্তান

অক্ষর আর বাক্যের ঝাড়ুদার  লিসলিসে অন্ধকার

ইচ্ছার ধ্বংসাবশেষকে স্বাধীনতা ভেবে চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ 

গাধারা নাকি সকলেই আইনের চোখে সমান

আইন নাকি গাধা-খচ্চরের পথে চলে

জঘন্য সময়ের জয়ধ্বনি করতে করতে অন্তসত্বা বপুর পুরুষেরা

ঘোষণা করেছে

চাকরি পাবার জন্য হাড়ভাঙা ছোটাছুটি বরদাস্ত করা হবে না 

 নাম জানতে চাইলে ‘আমি’ ঘোড়া বলে

‘আমি’ হলো সংবিধান, ‘আমি’ হলো  মুক্তি, ‘আমি’ হলো ভোট-নোট

বিস্ময়ের ক্ষমতা গাধাদের লুকোনো ভয়, হাড়ে-হাড়ে জানে সবাই

গাধারা ভেবেছিল বন্দুকের নলই সত্য, গুলি খেয়ে মরার পর 

 বুঝেছে বিস্ফোরণ মাত্রেই সত্য, রণে বনে জঙ্গলে গলিতে রাজপধে

সিংহাসন-ক্ষমতার আকাশ-ছোঁয়া ফিসফিসানি

গাধাদের কি শৈশব ছিল না ? তারা কি বেখবর লাফালাফি করেনি ?

খচ্চরের কি বাল্যকাল ছিল না বেহিসাবি আবদার

তারা তো জানতো না বাতিল হয়ে যাবে, রক্তের আলকাৎরায় দৌড়োবে

‘আমরা’ই রাষ্ট্র হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ‘আমরা’ই শাসক হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ

এক প্রতিধ্বনি আরেক প্রতিধ্বনিতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে 

সবে মিলি করি কাজ হারি-জিতি নাহি লাজের মানে পালটে গেছে

প্রতিনিধিরা যে যার নিজের প্রতিনিধি,

চম্পট দেবার রাস্তার মালিক তারাই

বিছানায় না শুলেও তারা নাক ডাকার শব্দ চাদরের তলায় রেখে গেছে

তাদের সুবিধা তারা মাথা নিয়ে জন্মায় না

কর্পোরেট প্যাকেজের সাহায্যে চ্যাভোঁর বিপণন চলছে

‘আমরা’ গাধারা কেন জটিল মগজ নিয়ে জন্মায় বিরক্তিতে চ্যাভোঁ ডাক পাড়ে

খচ্চররাও তাই, দুর্বিনীত বেয়াদব বত্তমিজ জাহিল

 ফেলো ট্র্যাভেলারদের দাঁত খুলে  সোনার মুকুট পরিয়ে দেয়া হয়েছে

গাধার মাথায় হীরে-ভূষিত সোনার মুকুট

খচ্চরের মাথায় চুনি-পান্না-পোখরাজ বিভূষিত প্ল্যাটিনাম টোপর

কলেজে মুখস্হ উনতিরিশ আর তিরিশ অনুচ্ছেদ

অপরাধ করতে করতে খসখসে  জিভ কালো

অথচ গাধা ‘আমরা’র দল গণ্ডোয়ানার ভূমিপুত্র

প্রান্তিক ‘আমরা’-গাধা বড়ো ‘আমরা’- গাধার সঙ্গে লড়ছে

তাদের দাবি তাদের মাংস কেন মানুষ-মানুষনিরা খাবে না

শুয়োরের মতন নোংরা প্রাণীর দেহের সব টুকরো খায়

লেজ খায় পা খায় কিন্তু গাধার চামড়া ছাড়া বাদবাকি কেন বিক্রি হবে না

আফ্রিকা থেকে গাধারা লোপাট হয়ে চীনে চলে যাচ্ছে

আম-কে-আম গুঠলি-কে-দাম কমিউনিস্ট দলের পুঁজিবাদী সেবায়

এমনটাই আশা করছেন কর্তা ও কর্তাভজারা

অন্ধকার পেছলা সুড়ঙ্গ দিয়ে ‘আমরা’ গাধা হাঁটছে

খচ্চররাও তাই

অন্ধকার বৈরী না আলো বৈরী

বাইরের লোকেরা এসে ঘোড়াগাধাখচ্চরদের দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে

দুই ভাগই এমন ভান করে যেন কতো তাদের ভালোবাসাবাসি

কারণ তারা মুখ দিয়ে একই রকমের ডাক পাড়ে

চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ

চেরনোবিলে ‘আমরা’ গাধা মরেনি ফুকুশিমায় মরেনি ‘আমরা’ গাধা

খচ্চররাও তাই

মরেছে ‘আমি’ ঘোড়া যাদের সংখ্যা চেপে যাওয়াই নিয়ম

কারণ ‘আমি’ ঘোড়াদের চাঞ্চল্যকর সংকট

‘আমরা’ গাধাদের সে সমস্যা নেই

খচ্চরদেরও তাই

আওয়াজ-তোলার, অমান্য করার,  প্রতিরোধ করার,  সায় না দেবার অপরাধ

পুলিশের গাড়িতে বসে রাতের চোর  গাঁটকাটার আস্তানা দেখেছে ‘আমি’ঘোড়া

শিক্ষকরা বলেছে কোথাও কোনো রহস্য নেই সবই বস্তু

হাঁপানি  হৃদরোগ হাড়ব্যথা হার্নিয়া-কাতরানি প্রোস্টেটকষ্ট অবস্তু নয়

দেহ আর সমাজদেহ থেকে বদরক্ত বের করার সাফাইক্রিয়া

মার্বেল পাথরে ‘আমরা’ গাধার খুরের রক্ত-আলকাৎরায় অবিনশ্বর

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই

তবু ‘আমরা’ গাধারা প্রশ্ন তোলেনা, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না

তারা জানে ঈশ্বর মোটেই সর্বশক্তিমান নয়, সিংহাসন সর্বশক্তিমান

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই বিশ্বাস

‘আমরা’ গাধাদের জন্য সিংহাসনের ভাড়া করা বড়দা-ভাইরা রয়েছে

অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে তাদের দেখা যায় না

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই

অকেজো ‘আমরা’ গাধাদের জন্য পিঁজরাপোলে স্হানাভাব সেখানে গাদাগাদি

একদল আরেকদলকে দুলাত্তি মেরে জায়গা বানায়

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই

প্রতিটি নিষেধের জন্য আইনের অনুমোদন দরকার হয় না

সিংহাসনের ঘাড় নাড়ানোই ‘আমরা’ গাধাদের শায়েস্তার  জন্য যথেষ্ট

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই

যে ‘আমরা’ গাধারা আগ্নেয়গিরি হয়ে জন্মেছে তাদের বলা হলো 

রাস্তায় ঝাড়ু লাগাও

‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই

সুশীল সমাজের বুড়োদের সঙ্গে তার মিছিলে যোগ দেবার অধিকার নেই

বুড়োরা বুড়োদের মতন আচরণ করবে

কাটমানি খাবে, ছেলেকে ঘাঁতঘোঁত শেখাবে, সিন্ডিকেট গড়বে

সিংহাসন জানেনা জাল ‘আমরা’গাধারা দিব্বি আসল ডাক্তারি করছে

জাল গাধা ‘আমি’ হতে চেয়েছিল

জাল খচ্চর ‘আমি’ হতে চেয়েছিল

ভর্তির কোটি টাকা ক্যাশ ডোনেশান দিতে না পারায়

 ‘আমরা’ গাধা হয়ে চালাচ্ছিল

তার আগে চৌমাথায় ‘আমরা’ ক্লাবের ট্র্যাফিক ভলেণ্টিয়ারি করেছে

নেড়ে ইমামের আরেকটা পাকিস্তান দাবির  হুমকিতে

অনেকে লাল ‘আমরা’ থেকে গেরুয়া  ‘আমরা’ হয়ে গেলো

যাহাঁ ‘আমরা’ গাধা ‘তাহাঁ’ আমরা খচ্চর

অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে নাকি পুকুর-জলা খাল-বিল হাওড়-বাওড় ছিল

‘আমরা’ গাধারা প্রশ্ন তুলেছে ভীষ্মের বিমাতা সত্যবতী কোন জাতের মেয়ে

মৎস্যজীবীর মেয়ে মানে তো শুদ্দুর

পাণ্ডব-কৌরবরা ছিল ক্ষত্রিয়

তারা ‘আমি’ গাধাদের প্রশ্রয় দেয়নি  ইউটোপিয়ার আশায় 

‘আমরা’ যারা তারা ভেবেছিল রামের রাজ্য মানে ইউটোপিয়া

‘আমরা গাধারাও ‘আমরা’ খচ্চররাও

‘আমি’ ঘোড়া সব ষড়যন্ত্রেরর ইশারা টের পাচ্ছিল

সেই ইউটোপিয়ায় মহাকাব্যের পরমপুরুষ ‘আমরা’ বউকে সন্দেহ করে

সরযু নদীর স্রোতহীনতার রঙ দুধ ঢেলে পালটে দিতে চায়

মহাকাব্যে ‘আমরা’ গাধারা অপাংক্তেয় নয়

সাঙ্কো পাঞ্জা খচ্চরের পিঠে বসে হেসেছে ডন কিহোতের 

লড়াই দেখে, উইণ্ডমিলের সঙ্গে লড়াই

এখনকার ‘আমরা’ গাধারা নীরব দর্শক, গোষ্ঠীক্যাচালের

বোমাবাজি গুলিগোলা চালাবাড়িতে আগুন দেখলেই

পালায়, ‘আমরা’ খচ্চররাও তাই, পালায় পালায় পালায়

যদিও ‘আমরা’ গাধারা এনকাডুর ঔরসে শামহাতের গর্ভে জন্মেছিল

লেখা আছে গিলগামেশের জীবনীতে

সাতদিন সাত রাত শামহাতের সঙ্গে সেক্স করে বুনো জানোয়ার 

এনকাডু হয়ে গেল ‘আমরা’ গাধাদের পূর্বপুরুষ

‘আমি’ গাধারা জন্মালো গিলগামেশের ঔরসে

সেই গিলগামেশ যে সিংহ মেরে বগলদাবায় নিয়ে বাড়ি ফিরতো

‘আমি’র পৃথিবী ‘আমি’র আকাশ ‘আমি’র জলরাশি ‘আমি’র ঝড়

‘আমি’র বনাঞ্চল ‘আমি’র সমুদ্র ‘আমি’র নক্ষত্র ‘আমি’র বিদ্যুৎ

‘আমি’র মহাগ্রন্হ ‘আমি’র কবিতা ‘আমি’র গান ‘আমি’র  আঁকা ছবি

হারিয়ে গেল গাধাদের জীবন থেকে

খচ্চরদেরও তাই

গাধা আর খচ্চররা হয়ে গেল অনুগত ‘আমরা’

 শেষ পর্যন্ত ‘আমি’ ঘোড়া একাই সুড়ঙ্গের বাইরে বেরোয়

‘আমরা’ গাধারা যে যখন পেরেছে দে-পিট্টান দিয়েছে

‘আমরা’ খচ্চররাও তাই

‘আমি’ ঘোড়া একা বাইরে আলোয় বেরিয়েই 

শোনে দলবদ্ধ চিৎকার, কাউকে দেখতে পায়না

 যেন লাউডস্পিকার নিজেই কথা বলছে আরেক লাউডস্পিকারের সঙ্গে

“আমি ঘোড়া বেরিয়েছে” 

আরে ‘আমরা’ গাধারা ‘আমরা’ খচ্চররা গেল কোথায়

গাধাজনতার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা কতোকাল

কতোযুগ হা-পিত্তেশ করে আছি মহাখচ্চরদের জন্য

এটা তো বেয়াড়া ঘোড়া

“এমন কিম্ভুত জীব তোরা দেখিসনি কখনও”

শয়ে-শয়ে কাঁসরঘণ্টা বাজাচ্ছে অদৃশ্য প্রাণীরা 

স্তোত্র পড়ছে সুর করে

জ্ঞানানন্দ ময়ং দেবং নির্মল স্ফটিকাকৃতি

আধারং সর্ববিদ্যানং হয়গ্রীবং উপস্মহে

‘আমি’ বুঝতে পারছিল না অদৃশ্য কন্ঠস্বরেরা কী বলতে চাইছে

এরা কি কখনও ‘আমি’র মতন ঘোড়া দ্যাখেনি

‘আমি’ ঘোড়া সুড়ঙ্গের বাইরে বেরিয়ে দেখল, গাছেরা শুকিয়ে আর ঝিমিয়ে 

একই গাছে কোনো পাতার রঙ গেরুয়া

কোনো পাতার রঙ সবুজ হলেও পাতার ওপর শাদা রঙের দ্বিতীয়ার চাঁদ

কোনো পাতা একেবারে কুচকুচে তার ওপর শাদা রঙে গুটিপোকা আঁকা 

জংধরা কলকারখানা ভেঙেচুরে পড়ে আছে, বাড়িগুলোয় কেউ থাকে না

দরোজা-জানালার কপাট নেই, ঝড়বৃষ্টিতে কালো আর ভুতুড়ে

এগিয়ে গিয়ে ‘আমি’ ঘোড়া দেখলো কয়েকটা দরোজায় চটের পর্দা

দেখলেই টের পাওয়া যায় মরা আর আধমরারা দিনগুজরান করে

এই মহাপৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর গন্ধ

রাস্তাগুলো কয়েক শতক সারানো হয়নি

জঞ্জালের পাহাড় পরিষ্কার হয়নি কয়েক শতক

এ তো একেবারে প্রাণীশূন্য জগৎ

দুর্গন্ধের ব্রহ্মাণ্ড

কিন্তু  রাস্তার ধারে  টাটকা ন্যাড় যেন এই মাত্র হেগে গেছে ‘আমরা’ গাধা-খচ্চর

ওই তো কয়েকজন ‘আমরা’গাধা যাচ্ছে

 চামড়া ছাড়ানো চারটে খচ্চরকে চাবকাতে চাবকাতে, রক্ত বইছে

ওই তো কয়েকজন ‘আমরা’ গাধা

 পিঠে ভারি আর ছেঁড়া পুঁটলি বইছে, পুঁটলি থেকে টাকা ঝরে পড়ছে

‘আমরা’ গাধাদের তাতে কোনো দুশ্চিন্তা নেই বলে মনে হলো

হাড়গিলে জনবিশেক জীব কোথা থেকে এসে ‘আমরা’ গাধাদের পায়ে পড়ল

‘আমরা’ গাধারা তাদের দুলাত্তি মেরে দুরে ছিটকে ফেলে দিলে

ভুখা জীবগুলোর গায়ে ছেঁড়া নোংরা কাপড়-চোপড়

কয়েকজন জীব মাটিতে ঝরে পড়া টাকা কুড়োতে লাগলো

 কেউ-কেউ চলল ‘আমরা’ গাধাদের পেছন পেছন কাঁদতে কাঁদতে

‘আমি’ ঘোড়ার দিকে সন্দেহের চোখে ভুরু কোঁচকালো ‘আমরা’ গাধারা

উদ্ভটবৃক্ষের জঙ্গল পেরিয়ে ‘আমি ’ঘোড়া এগোলো

ঘোড়ালয়ের খোঁজে 

‘আমি’ ঘোড়া বুঝতে পারছিল এই এলাকাটা খচ্চরালয় বা গাধালয়

ওই তো  ল্যাংটো ‘আমরা’ গাধারা  ‘আমরা’ খচ্চররা সামনের দুই পা এগিয়ে

মুখ দিয়ে ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজ তুলে

মর্ত্যচুম্বী শ্যামলিঙ্গ ঝুলিয়ে

একজন ছুটন্ত তরুণীজীবের  পেছনে দৌড়ে যাচ্ছে

‘আমি’ ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে একজন ‘আমরা’ খচ্চর চেঁচিয়ে বলল

এর ভগাঙ্কুর ছেঁটে পবিত্র করতে হবে

আমরা একে মুক্তি দিতে চাই

যতোদিন না এর রাগমোচন হচ্ছে ততোদিন মুক্তি পাবে না 

রাগমোচনের পর একে হত্যা করে মুক্তির স্বর্গে পাঠাতে হবে

ছুটন্ত তরুণীজীব ‘আমি’ ঘোড়ার দিকে তাকাবার সময় পেলো না

বাকি ‘আমরা’ গাধা আর ‘আমরা’ খচ্চর একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল

“মুক্তি স্বাধীনতা সাম্য জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ”

‘আমি’ ঘোড়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে পৃথিবী এখানে মরে গেছে

মরে পড়ে আছে কয়েক দশক

চলছে জ্বালানো পোড়ানো কামড়ানো কোপানো চাবকানো

বিষের ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেল গ্যাসগাড়ি ডুশেগুবকা

ভেতর থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চেঁচামেচি চিৎকার কান্না

‘আমরা’ খচ্চরের টানা গাড়িতে বসে দেখনবিচার করতে যাচ্ছে বুড়ো গাধা

যারা সমাজের মঙ্গলকরে পাপবোধে ভোগেনি তাদের বিচার হবে

বিশ্বাসে মিলায় মৃত্যু তর্কেতে  কোতল

‘আমি’ ঘোড়া এগিয়ে যায়

বিচারের প্রথম ধাপ নজরে-নজরে রাখা, তারপর ঘোর সন্দেহ

তারপর হেফাজত,  কারাগার দেখা গেল না, দেখা গেল কুৎসাগার

রাস্তার পাশে মাঝে-মাঝে ফাঁসিকাঠে ঝুলছে 

গাধা-খচ্চর, যাদের নাকচোখ দেখে অন্তর্ঘাতী মনে হয়েছে ঝুলছে তারা

চামড়ার ফাটল দিয়ে এখনও কান্নার জল গড়াচ্ছে

বহুকাল  ঝুলে শুকিয়ে গেছে তারা, মাংস খসে হাড় বেরিয়ে পড়েছে

‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়

দারা শুকোর নাড়ি আর গর্ভফুলের ওপর সিংহাসনের পিরামিড

কর্পোরেট সিংহাসন

আমলাঘোঁট সিংহাসন

তত্ত্বক্যাচাল সিংহাসন

ধর্মগুরু সিংহাসন

মোল্লা সিংহাসন

 পাদ্রি সিংহাসন

পাওয়া আর পাইয়ে দেবার চরস-চণ্ডু মাদকের জানলায়

কিউ দিয়েছে ‘আমরা’ খচ্চরেরা

কিউ দিয়েছে ‘আমরা গাধারা

জীবনকর হিসাবে জমা দিচ্ছে যে যার কন্ঠের বাগযন্ত্র স্বরযন্ত্র

যাতে ওরা ছলনা প্রতারণা করতে না পারে

যাতে ওরা যে যার নিজের স্বরূপ ফাঁস করতে বাধ্য হয়

তার বদলে টাকাকড়ি উত্তরীয় মেডেল পাবে

‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়

একই সঙ্গে আগুন আর তুষার বৃষ্টি হচ্ছে

কাগজের দশবারোটা পাহাড় পোড়াবার আগুন-ফুলকি উঠেছে ওপরে

গোপন নথিপত্র পোড়ানোর আগুন ঝরছে

বিরোধীদের পাণ্ডুলিপি পোড়ানোর আগুন ঝরছে

আকাশ ধোঁয়ায় ধোঁয়াক্কার, কার্বন মনোক্সাইডে নীলাভ

কোথায় লুকিয়ে আছে বিরোধীরা যাদের পাণ্ডুলিপি পুড়ছে

তারা কীই বা লিখেছিল পাণ্ডুলিপিতে যে পুড়িয়ে নষ্ট করতে হবে

তার মানে কিছু লোকের সাহস আছে

বিরোধীতা করার, অমান্য করার

তারা কোথায়

যে তরুণী পালাচ্ছিল সে কি সিংহাসনের বিরোধী

‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়

কোথাও সবুজ ঘাস নেই 

শুকনো ঘাসও নেই

বিরাট-বিরাট কাঁকড়া হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছে

এরকম বড়ো-বড়ো কাঁকড়া তো সমুদ্রেও হয় না

এখানে হলো কেমন করে

হলো না এলো

কোথা থেকে এলো এতো দৈত্যকাঁকড়া

একদল ‘আমরা’ খচ্চর চেঁচাতে-চেঁচাতে যাচ্ছে

কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও ভেঙে দাও, তাদের নিজেদের হাত ইস্পাতের

ইস্পাতের হাতে ধর্মকাঁটার লুকোনো হুল

হুলের কলম দিয়ে  ইতিহাস লিখবে বলছে

বর্তমানকে তো নানা ক্যারদানি করেও বদলানো গেলো না

তাই অতীতকে বদলে ফেলতে চাইছে

শুনতে পায় ‘আমি’ঘোড়া

‘আমি’ ঘোড়া এগোয় এগোয় এগোয় এগোয়

পায়ের কাছে অজস্র দৈত্যকাঁকড়া সামলে এগোতে হয়

দেখতে পায় পোড়োবাড়ির খোলা জানলায় মুখ ঢোকাবার জন্য ঠেলাঠেলি

পাতলা-ক্যাঙলা-রোগারা ছিটকে পড়ছে ধাক্কা খেয়ে

দিনে এক হাতা পান্তা  প্রতি হাঁ-মুখের জন্য বরাদ্দ

উঁচু জাতের বরাদ্দ শেষ হলে নিচু জাতের পালা

আশরাফদের বরাদ্দ শেষ হলে আতরাফদের পালা

কিন্তু উঁচু জাতের গাদাগাদি শেষ হতেই তো বোধহয় তিন দিন লাগবে

মাঝপথে ফুরিয়ে গেলে সেদিনের মতো জানলা বন্ধ

জানলা বন্ধ হবার পর কয়েকজন ‘আমরা’ গাধা কাঁদতে কাঁদতে যায়

কয়েকজন ‘আমরা’ খচ্চর কাঁদতে কাঁদতে যায়

তাদের ফিসফিসে অভিযোগ শুনতে পায় ‘আমি’ ঘোড়া

“আমরা শেয়াল আর হায়না মেরে  দিই, সেই মাংস রান্না করে ওরা খাওয়ায়

কারণ আমাদের রান্নার বাসন কোসন নেই

রান্নার আগুন নেই

সব আগুন ওরা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে

বাড়িঘর নেই বলে ঝড় বৃষ্টি রোদ থেকে বাঁচতে

আমরা শেয়ালের আর হায়নার গর্তে বসবাস করি”

‘আমি’ ঘোড়া এগোয়

উরিত্তেরি

এই অঞ্চলের সবায়ের কেড়ে-নেয়া ঘুম জ্বলিয়ে 

ল্যাম্পপোস্টের মশালডুম আলো ফেললো তল্লাটে 

দেখতে সুবিধা হলো ‘আমি’ ঘোড়ার

ওই তো সেই তরুণী 

এই দিকেই দৌড়ে আসছে

 পেছন পেছন ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজ তুলে 

সামনের দুই পা এগিয়ে ল্যাংটো ‘আমরা’ গাধা আর ‘আমরা’ খচ্চরেরা

শ্যামলিঙ্গ ঝুলিয়ে পিছু নিয়েছে

‘আমি’ ঘোড়াকে দেখে লাফিয়ে তার পিঠে চেপে লাগাম ধরল তরুণী

‘আমি’ ঘোড়া ছুটতে আরম্ভ করল

এই মরা পৃথিবী থেকে বাইরে বেরোবার জন্য

বেরোতেই হবে





Comments

Popular posts from this blog

কফিহাউসে চেঙ্গিজদা, ল্যাঙড়াদা, গুলপিসি...অ্যান্টি-হিস্ট্রির আড্ডা : মলয় রায়চৌধুরী লিখিত পৃথিবীর ইতিহাস

প্রদীপ চৌধুরী, ফরাসি কবি, বাঙালি কবি, হাংরি আন্দোলনের কবি : মলয় রায়চৌধুরী

Malay Roychoudhury interviewed by Anupam Mukhopadhyay